বাংলাদেশে বেশ কিছু বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের হেডম দেখায়। ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেয়া এই রাজনৈতিক দলটির এমন আচরণ আমাদের ব্যথিত করে, আমরা মর্মাহত হই। বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে নিয়ে ইদানিং বিএনপির নেতারা বিভিন্ন সভা–সমাবেশে যে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাতে মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্র তাদের হাতে ধরে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবেন। অথচ বিএনপি নামক এই তথাকথিত রাজনৈতিক দলটি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে বিবেচিত। এর পেছনে অবশ্য যথেষ্ট যৌক্তিক কারণও রয়েছে।
২০০১ সালে বিএনপি–জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর সীমাহীন দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎবিহীন খাম্বা, ‘বাংলা ভাই‘ সৃষ্টিসহ নানাবিধ জঙ্গি বাহিনী তৈরি করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। পরবর্তীতে অনেক পট পরিবর্তনের ফলে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। দিন বদলের স্লোগান নিয়ে ক্ষমতায় আসে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল–বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় এসেই বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করে সরকার। শুরু করেন যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরসহ দুর্নীতিবাজদের বিচার কর্যক্রম। এখানেই বাধে বিপত্তি।
২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের জন্য বিএনপি–জামায়াত শুরু করে অগ্নি সন্ত্রাস। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার ও অন্যান্য বিচার বানচালের জন্য বিএনপি সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করে। তাদের এহেন কাজে সারাদেশ সন্ত্রাসের এক অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। হেফাজতকাণ্ডে বিএনপির সরাসরি সম্পৃক্ততা, ধর্মকে ব্যবহার করে ইসলামের অপব্যবহার করে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠিত করাসহ বিএনপি সারাদেশে নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসী তৎপরতা চালায়। যাতে করে দেশে ও বিদেশে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে থাকে।
বিশেষ করে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে বিএনপি যে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কায়দায় পেট্রোল বোমা মেরে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল; বাস, সরকারি অফিস–আদালতে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল– সেসব কর্মকাণ্ডই বিএনপিকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিতি এনে দেয়।
বিএনপি বরাবরই ক্ষমতায় এসেছিল অবৈধভাবে। তারা এখনো মনে করে, বিদেশি বা অন্য কোনো শক্তি তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। অথচ যাদের ভরসায় বসে আছে বিএনপি, তাদের কাছেই তারা সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যায়িত। বিএনপির অনেক দুর্নীতিবাজ নেতা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিল কিন্তু বিএনপির সাথে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় আশ্রয় দেয়নি দেশটি। কানাডার ফেডারেল আদালতও বিএনপির কর্মকাণ্ডের জন্য একাধিকবার দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করেছে।আমরা নতুন প্রজন্ম যখন দেখি, বাংলাদেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল বহিঃবিশ্বের কাছে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত হয়, তখন লজ্জায় আমাদের মাথানত হয়ে যায়।
বিএনপি কেন সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত:
২০১২ সাল থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, শাহবাগের গণজাগরণ, হেফাজতের ১৩ দফা ও ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপি জামায়াত সারাদেশে যে নৈরাজ্য ও সহিংসতা চালিয়েছিল তার ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপির ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে একটি অরাজকতা সৃষ্টিকারী দল হিসেবে। বিশেষত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা, নিরীহ জনগণের ওপর পেট্রোল বোমা হামলা, অগ্নিসন্ত্রাস এবং সর্বোপরি জামায়াত শিবির ও মৌলবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার কান্ট্রি রিপোর্টে বিএনপি বাংলাদেশের নাশকতা সৃষ্টিকারী ও জঙ্গি–সন্ত্রাসীদের মদদদাতা সংগঠন হিসেবে পরিগণিত হয়। আর এ বিষয়টি উঠে আসে বিএনপির দলীয় পরিচয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনকারীদের আবেদন আদালতে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার মাধ্যমে।
যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি টায়ার থ্রি স্তরের সন্ত্রাসী সংগঠন:
২০১৪ সাল থেকে বিএনপির দলীয় পরিচয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করা একজন আবেদনকারীর আবেদনও মঞ্জুর করে নি যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অথরিটি। নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস ও নিউজার্সির অভিবাসন সংশ্লিষ্ট আদালত প্রদত্ত রায়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিএনপিকে ‘টায়ার–থ্রি‘ স্তরের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করায় আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
যেকোনো স্তরের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত হলে উক্ত সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার প্রাথমিক যোগ্যতা হারায় যা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ক্ষেত্রে ঘটেছে। বিএনপির দলীয় পরিচয়ে আবেদনকারীদের বিভিন্ন রাজ্যে কারাবন্দি করে রাখা হয়। শুধুমাত্র টেক্সাসের এলপাসো ডিটেনশন সেন্টারে বিএনপির পরিচয়ে আশ্রয় প্রার্থনাকারী ৮০ জনের বেশি বাংলাদেশীর আটকের তথ্য জানা যায়। মুক্তির দাবিতে অনশন করায় বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল।
প্রার্থনার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বিএনপি সংশ্লিষ্টতার কারণে। বিএনপিকে যদি সন্ত্রাসী সংগঠন না বলা হয়, তাহলে আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
উল্লেখ্য, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ও সেটন হল ইউনিভার্সিটি সহ যুক্তরাষ্টের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপিকে টায়ার থ্রি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্তির বিষয়বস্তু ইমিগ্রেশন ল–এর পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত।
সব দেশেরই একটি কূটনৈতিক পলিসি রয়েছে। তারা এই পলিসির বাহিরে যেতে পারে না। কিন্তু নিজ রাষ্টের সুবিধার জন্য সময় বুঝে দরকষাকষি করতে পারে বা করে। তাই বলে বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের এটা ভাবলে বোকামি ছাড়া আর কিছুই হবে না যে, তারা তাদের ক্ষমতা বসাবে। দেশের সংবিধান ও জনগণের প্রতি আস্থা রেখে, নিজ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রেখে ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা–বোনের ইজ্জতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিএনপি সুস্থ ও গণতান্ত্রিক ধারায় রাজনীতিতে ফিরে আসবে আমরা তরুণ প্রজন্ম এটাই প্রত্যাশা করি।
লেখক: ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক