মানিকগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ঘিওর উপজেলার আশাপুর গ্রাম। এ গ্রামের কাঁচা আর ভাঙাচোরা রাস্তার পাশে কালীগঙ্গা নদী ঘেঁষে বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেনের বাড়ি। ছোট বাড়িটিতে দুটি থাকার ঘর। নিজের শোবার ঘরটিকেই লোকমান বানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের ছবির সংগ্রহশালা।
২০০৯ সাল থেকে নিজের শোবার ঘরটি জেলার বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি দিয়ে সাজিয়েছেন লোকমান। সেখানে শোভা পাচ্ছে যুদ্ধের সময়কার ঐতিহাসিক নানা ছবি। লোকমানের সংগ্রহশালায় তিন শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার ছবি স্থান পেয়েছে, যাঁদের মধ্যে অনেকেই আজ জীবিত নেই।
মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি দেখতে জেলার দূর-দূরান্ত এলাকার স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ছুটে যান। স্বাধীনতা ও বিজয়ের মাসে লোকমানের বাড়িতে আগত দর্শনার্থী বেশি থাকে।
মুক্তিযুদ্ধে নিজের নানা স্মৃতিও মেলে ধরেন লোকমান হোসেন। তিনি ১৯৬৫ সালে লোকমান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে জওয়ান হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে দুই মাসের ছুটিতে বাড়িতে আসেন। ২৮ মার্চ কর্মস্থলে ফেরার কথা থাকলেও তিনি থেকে যান এলাকাতেই। এরপর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ২২ জুন তিনিসহ ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রথম যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি সম্মুখ যুদ্ধ করেছেন লোকমান হোসেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জেলাবাসীর কাছে তিনি ‘টাইগার’ লোকমান হিসেবেই বেশি পরিচিত।
লোকমান হোসেন জানালেন, পরিচিত সব মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ছবি সংগ্রহ করতে শুরু করেন। অনেকে আগ বাড়িয়ে ছবি দিলেও আবার অনেকে কালক্ষেপণ করেন। বিশেষ করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি সংগ্রহ করতে সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হয়েছে। তবুও পিছু ছাড়েননুি। দূর-দূরান্তে পায়ে হেঁটে গিয়েও ছবি সংগ্রহে দমে যাননি তিনি।
সংগ্রহশালাটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়াই লোকমানের স্বপ্ন।
মুক্তিযুদ্ধকালীণ আঞ্চলিক কমান্ডার তোবারক হোসেন ওরফে লুডুর অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেন লোকমান হোসেন। জেলা সংসদের সাবেক কমান্ডার তোবারক হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে লোকমানের ছিল সাহসী ভূমিকা। এখন শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে ও উদ্বুদ্ধ করতে স্কুল-কলেজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নিজ বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের ছবির সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন। তাঁর এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে জানবে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে।
এমি/দীপ্ত