শুক্রবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫
শুক্রবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫

মাদ্রাসা শিক্ষার্থী থেকে জাতীয় রাজনীতিতে আলোচিত ওসমান হাদি

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সিঙ্গাপুর জেনারেল হসপিটালে (এসজিএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

গত ১২ ডিসেম্বর গণসংযোগের জন্য রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গেলে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে হাদিকে গুলি করা হয়। গুলিটি তার মাথায় লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্প্রতি আলোচিতসমালোচিত নামগুলোর একটি হয়ে উঠেছিলেন শরীফ ওসমান হাদি। নিজের বক্তব্য আর কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। অল্প সময়েই সমর্থকদের কাছে জনপ্রিয় এই যুবক প্রতিপক্ষের কাছে হয়েছেন চক্ষুশূল।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিভিন্ন রায় নিয়ে সোচ্চার ছিলেন হাদি। সামাজিক মাধ্যম কিংবা বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুষ্ঠানআলোচনায় নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর ইনকিলাব মঞ্চ নামে একটি রাজনৈতিকসাংস্কৃতিক প্লাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হন ওসমান হাদি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে শুরু করেন প্রচার প্রচারণাও। সম্প্রতি এমনই এক প্রচারাভিযানের সময় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত হন হাদি। রাজধানীর বিজয় নগর পানির ট্যাঙ্কি এলাকার বক্স কালভার্ট রোডে হামলার শিকার হন ইনকিলাব মঞ্চের এই নেতা।

শুরুতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় তাকে। পরে উন্নত আইসিইউ সাপোর্টের জন্য তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকার এভায়কেয়ার হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, অত্যন্ত শঙ্কটজনক তার অবস্থা।

অবশ্য জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সমর্থকদের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে আসছিলেন হাদি। কয়দিন আগে এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টও দিয়েছিলেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তার ওপর এই হামলার ঘটনা নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে লেখাপড়া শেষ করা শরীফ ওসমান হাদি। পাশাপাশি একটি ইংরেজি শিক্ষার কোচিংয়েও ক্লাস নিতেন তিনি।

শিক্ষা জীবন থেকেই রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন বরিশালের ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থেকে উঠে আসা এই যুবক। ঝালকাঠির এন এস কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করা ওসমান হাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে চলে আসেন রাজধানীতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় বিভিন্ন সামাজিকসাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সক্রিয় কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দেখা যায়নি তাকে। মূলত ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থান তাকে তুলে আনে রাজনীতির মঞ্চে।

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় নানা ভূমিকার মাধ্যমে আলোচনায় আসেন হাদি। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিকসাংস্কৃতিক প্লাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চ গঠন এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে তার দেওয়া নানা বক্তব্য আলোচনার জন্ম দেয়।

ইনকিলাব মঞ্চ গঠনের পর জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি রক্ষা, অপরাধীদের বিচার, আহতনিহত ব্যক্তিদের স্বীকৃতি এবং জুলাই চার্টার ঘোষণার দাবি তুলে সভা সমাবেশ শুরু করেন হাদি। যা তাকে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে।

‌‘সমস্ত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতাসার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ’ইনকিলাব মঞ্চের এই লক্ষ্য এবং এই প্ল্যাটফর্ম থেকে তার দেওয়া আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী নানা বক্তব্য তাকে তৈরি করে দেয় একটি সমর্থক গোষ্ঠী।

অবশ্য এর মাধ্যমে প্রতিপক্ষের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন হাদি। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে কিংবা সভাসমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বেশ কয়েকবার আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।

আরও পড়ুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More