আজ ২৬ জুন, বৃহস্পতিবার; বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য—‘মাদক সেবন রোধ করি, সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ি’। দিনটি উপলক্ষে দেশব্যাপী নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮৩ লাখ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৪.৮৯ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৭৭ লাখ ৬০ হাজার, নারী ২ লাখ ৮৫ হাজার এবং শিশু–কিশোর প্রায় ২ লাখ ৫৫ হাজার।
এদের মধ্যে গাঁজায় আসক্ত প্রায় ৬১ লাখ, ইয়াবায় ২৩ লাখ, মদপানে ২০ লাখ ২৪ হাজার এবং ফেনসিডিল, হেরোইন, ঘুমের ওষুধ, ড্যান্ডি ও অন্যান্য মাদকে আসক্ত আরও কয়েক লাখ মানুষ রয়েছে। কেউ কেউ একাধিক মাদক গ্রহণ করায় মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ১৭ লাখ ছাড়িয়ে গেলেও প্রকৃত মাদকাসক্তের সংখ্যা হিসেব করা হয়েছে ৮৩ লাখ।
ডিএনসি’র তথ্য মতে, দেশের চারটি অঞ্চলের ১০৪টি সীমান্ত পয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখান দিয়ে ভারত ও মিয়ানমার থেকে ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক প্রবেশ করছে। গোল্ডেন ক্রিসেন্ট ও গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল মাদকচোরাচালান পথের অংশ হওয়ায় বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে মাদকের প্রধান গন্তব্য।
এদিকে আজ প্রকাশিত ‘ড্রাগ রিপোর্ট ২০২৪’–এ বলা হয়েছে, দেশে হোম ডেলিভারিসহ সব ধরনের মাদক সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। শুধু শহর নয়, গ্রাম–গঞ্জেও গড়ে উঠেছে মাদকের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক।
মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ডিএনসি, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড। তবে মাদক ব্যবসার মূল হোতারা রয়ে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে—এমন অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছোটখাটো বিক্রেতা ও ব্যবহারকারীদেরই গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএনসির তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে মাদক–সংক্রান্ত ৩ হাজার ৬৯৮টি মামলার মধ্যে ৫৫ শতাংশ মামলায় আসামিরা খালাস পেয়ে গেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু আইন প্রয়োগ নয়, প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক সচেতনতা, প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্বাসন এবং তরুণদের জন্য ইতিবাচক বিকল্প ব্যবস্থা। তা না হলে সমাজ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভয়াবহ বিপদের মুখে পড়বে।