শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪

ভোগান্তির আর এক নাম কালীগঞ্জ নির্বাচন অফিস

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

স্ত্রীকে নতুন ভোটার বানাবেন বলে গত ৫ মাস ধরে চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনভাবেই ভোটার করতে পারেন নি। উপায় না পেয়ে গত ২০ মার্চ সকল কাগজপত্র নির্বাচন অফিসের সামনেই ছিঁড়ে ফেলেন তিনি। এর আগে এমন ভোগান্তির স্বীকার তিনি কখনোই হননি। কথাগুলো বলছিলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া এলাকার হৃদয় হোসেন মুন্না।

তিনি বলেন, স্ত্রীকে নতুন ভোটার বানানোর জন্য ৫ মাসে অন্তত ৬/৭ বার কালীগঞ্জ নির্বাচন অফিসে গিয়েছেন। প্রতিবার গেলেই বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হয়। গেলেই কাগজ ঠিক নেই বলে জানানো হয়। একজনকে কাগজ ঠিক আছে কিনা দেখালে অন্যজন বলে ঠিক নাই। আবার একজন কাগজ ঠিক আছে বললে অন্যজন আগামীকাল আসতে বলে। এভাবে ঘুরিয়েই যায়। এমন হয়রানি বন্ধ করা উচিৎ।

লিখন হোসেন নামের এক যুবক বলেন, ছবি ও আঙুলের ছাপ দিয়েছিলাম বেশ আগে। জাতীয় পরিচয়পত্র খুব দরকার হওয়ায় অফিসে যোগাযোগ করি। অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আল আমিন জানায় আঙুলের ছাপ ম্যাচ হয়নি। এই কাজ হেড অফিস থেকে করানো হবে। প্রথমে অফিসের আল আমিনকে ২ হাজার টাকা দিই। এরপর দুইদিন পর সেই টাকা ফেরত দিয়ে দেয়। পরে অফিসে গেলে জানায় এ কাজের জন্য ৬ হাজার টাকা দিতে হবে। ওইদিন তার বড় ভাবি টাকা দিলে ১ ঘন্টার মধ্যে অনলাইন জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. আল আমিনের মোবাইলে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

এমন অভিযোগ পেয়ে গত বৃহস্পতিবার এক নতুন ভোটারের স্বজন হয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসে যান যুগান্তরের এই প্রতিবেদক। এর আগে ওই নতুন ভোটার কয়েকবার নির্বাচন অফিসে গিয়েছেন। তাকেও বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে। কাগজপত্র ঠিক নেই বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন অফিসে গেলে অফিস সহায়ক খোকন বিশ্বাস জানান, তাকে ৫ হাজার টাকা ও উপরের বসকেও খুশি করলে নতুন ভোটার হওয়া যাবে। অফিস সহায়ক খোকন বিশ্বাসের এই ভিডিও বক্তব্য প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। এরপর বিষয়টি বুঝতে পারায় অফিস সহায়ক খোকন বিশ্বাস এই প্রতিবেদককে নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করেন।

এরপর অফিসে নতুন ভোটার হতে আসা কয়েকজন এই প্রতিবেদককে জানায়, ভোগান্তির আর এক নাম কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিস। কোন কাগজ আনতে হবে এটা একবারে বলে না। গেলেই বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হয়। আর টাকা দিলে কোন ভোগান্তি নেই।

এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিনি দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকায় ভোটার হতে পারেন নি। দেশে বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন পড়ে। কয়েকদিন তিনি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েছেন। তাদের চাহিদা মোতাবেক কাগজপত্র জোগাড় করেছি। নির্বাচন অফিসের কথামতো দেশের কোথাও ভোটার আছি কিনা ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে প্রত্যয়ন নিয়েছি। তারপরও এখন বলছে, স্বামীর বাড়িতে ভোটার হতে হবে, বাবার বাড়ি ভোটার হতে পারবেন না। তিনিও নতুন ভোটার না হয়ে আবার ফিরে যাচ্ছেন প্রবাসে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, নতুন ভোটার হতে গেলে নির্বাচন অফিসের ২য় তলায় সামনেই বসে থাকেন অফিস সহায়ক খোকন বিশ্বাস। তিনি প্রথমে কাগজপত্র দেখেন। এরপর তিনি নতুন ভোটারদের সাথে কথা বলেন। যার কাগজপত্রে সমস্যা আছে, তাকে দেওয়া হয় টাকার অফার। আর যাদের কাগজপত্র ঠিক আছে তাদেরকে দিনের পর দিন ঘুরানো হয়।

অভিযোগের বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক খোকন বিশ্বাস বলেন, কয়েকদিন আগে এক মহিলা আসছিল। সে বিদেশী পার্টি। সে স্বামীর বাড়িতে ভোটার হবে। এ সময় স্যারকে বলে করিয়ে দিতে পারলে কিছু মিষ্টি খাওয়ার জন্য দিতে বলেছিলাম। এরপর তিনি ৫ হাজার টাকা চাওয়ার কথাটি মিথ্যা বলে দাবি করেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. রশিদুল আলম বলেন, এমন কোন অভিযোগ আগে পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।

শাহরিয়ার/ আল / দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More