ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা বিনা বিচারে এক বছর ধরে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তাকে যে মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই মামলার এখনো বিচার শুরুই হয়নি।
জানা গেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০২০ সালে খাদিজার বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
খাদিজা জবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় দুটি মামলা করে পুলিশ।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ ওয়াজ লাইভ’ শিরোনামে এক ভিডিও দেখতে পান পুলিশের উপপরিদর্শক খাইরুল ইসলাম। সেখানে সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরার উপস্থাপনায় মেজর (অব.) দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বাংলাদেশের বৈধ গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরা ও মেজর দেলোয়ার তাদের ইউটিউব চ্যানেল ও ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজগুলোতে উল্লিখিত ভিডিওগুলো আপলোড করে দেশের চলমান স্থিতিশীল পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা তাদের মিথ্যা তথ্যপূর্ণ আলোচনা ইউটিউব, ফেসবুকে প্রচার করে দেশের সাধারণ জনগণকে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে তাদেরকে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত করার চেষ্টা করেছেন।
এ ছাড়া তারা উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারের মাধ্যমে সরকারবিরোধী মনোভাব তৈরি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করেছেন। সেইসঙ্গে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন। তাই আসামিরা ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫/২৯/৩১/৩৫ ধারা লঙ্ঘন করেছেন।
মামলার তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ১৬ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম। আদালত চার্জশিট গ্রহণ করে আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
পরে গত বছরের ২৭ আগস্ট মিরপুরের বাসা থেকে খাদিজাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। খাদিজা গ্রেফতার হলেও মেজর দেলোয়ার এখনো পলাতক রয়েছেন। জানা গেছে, তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন।
এদিকে, বিচারিক আদালতে একাধিকবার খাদিজার জামিন আবেদন নাকচ হয়। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাকে জামিন দেন হাইকোর্ট। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত ১০ জুলাই আপিল বিভাগ ওই আদেশ চার মাসের জন্য মুলতবি রাখেন। গত জুলাইয়ে আপিল বিভাগের এক আদেশে আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত (৪ মাস) তার জামিনসংক্রান্ত আবেদনের শুনানি স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রাখা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এতে ধারণা করা হচ্ছে, এর আগে তার জামিনসংক্রান্ত আবেদন শুনানির সুযোগ নেই। খাদিজা বর্তমানে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে বন্দি।
খাদিজার পরিবারের দাবি, ২০২০ সালে খাদিজার বিরুদ্ধে মামলার সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর।
খাদিজার বোন সিরাজুম মুনিরা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মামলার সময় খাদিজার বয়স আমলে নেয়া হয়নি। এখন বিচারের সময়ও তার বয়সকে আমলে নেয়া হচ্ছে না। এটি যদি আমলে নেয়া হয়, তাহলে তার বিচার হবে শিশু আদালতে।