বাউ মুরগির পালনে সাবলম্বী হয়েছে দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার বিনাইল গ্রামের সুলতান মাহমুদ ও রাহেলা দম্পতি। তাদের নিজ বাড়ির পাশেই ২৫ শতক জমির উপর গড়ে তুলেছেন পোল্ট্রি ফার্ম। পোল্ট্রি ফার্মে প্রথমে সোনালি মুরগি বাচ্চা নিয়ে এসে তিন মাস পরিচর্যা করে বাজারজাত করে। ফার্মে লাল ডিম দেয়া মুরগিও প্রতিপালন করতেন তারা। এসব মুরগির ডিম পাওয়ার জন্য তাদের প্রতিদিন প্রচুর খাবার দেয়ার প্রয়োজন হতো। পোল্ট্রি খাবারের দাম ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়ায় ডিম দেওয়া মুরগি প্রতিফলনে শেষের দিকে লাভ হচ্ছিল না।
ফলে স্থানীয় বিরামপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের পরামর্শে নতুন উদ্ভাবন করা বাউ মুরগি গত পাঁচ মাস আগে খামারে উঠান। তারা স্বামী–স্ত্রী দুজন মিলে খামারে বাউ মুরগির পরিচর্যা করে থাকেন। ফলে কাউকে শ্রমিক হিসেবে নেয়ার প্রয়োজন হয় না। এ কারণে নিজেরাই বাউ মুরগি পালনে নতুন উদ্দীপনা পেয়েছে তারা।
এই খামারি দম্পতিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাউ মুরগি দেখতে হুবহু দেশি মুরগির মতো হলেও শারীরিক বৃদ্ধি ব্রয়লার বা বিদেশি জাতের মুরগির মতো। এমন জাতের মুরগি উদ্ভাবন করেছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকরা। এই মুরগিই এবার ছড়িয়ে গেছে সারাদেশে।
এই মুরগি পালন করে সফল হয়েছেন অনেক খামারি। মাত্র ৪০ থেকে ৪২ দিনে এই মুরগির ওজন ১ কেজি ছাড়িয়ে যায়। সারাদেশের মত দিনাজপুরে বিভিন্ন উপজেলায় পোল্ট্রি খামারিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই মুরগি।
জেলার বিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষের কাছেও এই মুরগি ‘বাউ’ মুরগি নামেই পরিচিত। ইতোমধ্যে তাদের কাছে নতুন আস্থার জায়গা তৈরি করেছে নতুন জাতের এই মুরগি।
বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় এখন অনেক খামারি ব্রয়লারসহ অন্যান্য জাতের মুরগির পরিবর্তে বাউ মুরগিকে বেছে নিচ্ছেন। জেলার বিরামপুর উপজেলার কাটলা, দাউদপুর ও বিনাইল ইউনিয়নের বেশ কিছু পোল্ট্রি খামারে এই মুরগি পালিত হচ্ছে।
খিয়ারদুগাপুর গ্রামের বাউ মুরগির খামারি সজল রায় জানান, ‘আমার বাড়ি আমার খামার’– প্রকল্প থেকে স্বল্প সুদের ঋণ নিয়ে স্থানীয় প্রাণী সম্পদ বিভাগের মাঠ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় পরীক্ষামূলকভাবে খামার করার জন্য ২৫০টি মুরগি নিয়েছিলাম।
মাত্র ৪৫ দিনেই গড় ওজন প্রায় ১ কেজি ৩০০ গ্রাম হয়েছে। যা বিক্রি করে লাভবান হয়েছি। বর্তমানে আমার খামারে প্রায় ২ হাজার বাউ মুরগি রয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোছা. নার্গিস আক্তার বলেন, ব্রাউ ব্রো বা বাউ মুরগি পালন করে এই উপজেলার অনেকেই লাভের মুখ দেখেছে। খেতেও দেশি মুরগির মতোই স্বাদ।
এই মুরগিতে রোগ–বালাই খুবই কম হয়ে থাকে। সেলফ–হেল্প অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন প্রোগ্রাম (শার্প)’র প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেজাউল করিম বলেন, বাউ মুরগি এখন সবার কাছেই পরিচিত। খেতে সুস্বাদু, মৃত্যুহার কম, উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণে খামারি ও ভোক্তা পর্যায়ে এর চাহিদাও অনেক।
এজে/দীপ্ত সংবাদ