পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র গোলাম হাসনায়েন রাসেল মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি পাবনা–৩ (চাটমোহর–ভাঙ্গুড়া–ফরিদপুর) আসনের সংসদ সদস্য এবং পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. মকবুল হোসেনের ছেলে।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, পুরো উপজেলায় নিজের পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে বড় ছেলে রাসেলকে উপজেলা নির্বাচনে এবং ছোট ছেলে ইবনুল হাসান শাকিলকে পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাতে যাচ্ছেন এমপি মকবুল। এ নিয়ে উপজেলার নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে আশঙ্কা ভোটার ও নেতাকর্মীদের। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এমপি মকবুল হোসেন।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পত্র দিয়ে ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেন এমপি মকবুল হোসেনের বড় ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনায়েন রাসেল। এরপরই তিনি আসন্ন ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে ভাঙ্গুড়া উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীরা জানান, নিজ উপজেলার রাজনীতি নিজেদের কবজায় রাখার জন্য সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন তার বড় ছেলেকে প্রথমে ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র এবং পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করেছেন। ছোট ছেলে ইবনুল হাসান শাকিলকে করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এবার বড় ছেলে রাসেলকে পৌর মেয়র থেকে সরিয়ে করতে যাচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। আর ছোট ছেলে ইবনুল হাসান শাকিলকে পৌরসভার মেয়র নির্বাচন করাতে যাচ্ছেন।
তারা জানান, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাউকে সমর্থন না দিতে ও নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার না করতে এমপি–মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এমপি মকবুল হোসেনের সমর্থনেই তাঁর বড় ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এমপিপুত্র ভাঙ্গুড়া উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় আর কেউই প্রার্থী হতে সাহস পাচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে এমপি পুত্র বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারেন।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. বাকিবিল্লাহ বলেন, ‘আমি নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এমপির ছেলে যেখানে প্রার্থী হচ্ছে, সেখানে নির্বাচন কোনোভাবেই প্রভাবমুক্ত হবে না। আমি এ কারণে প্রার্থী হচ্ছি না।’
ভাঙ্গুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লোকমান হোসেন বলেন, ‘এসব বলে কি লাভ বলেন। দলের নির্দেশনা খোদ এমপি সাহেব মানেন না। তার ভয়ে কোনো নেতা কিছু বলে সাহস পায় না। নেতাদের ডেকে এমপি বলেন দেন– তোমরা লোকজন নিয়ে আমার বাড়িতে গিয়ে আমার ছেলেকে তোমাদের জন্য চাইবে। ব্যাস, এক দুইশ’ মোটরসাইকেল নিয়ে নেতাকর্মী তার বাড়িতে গিয়ে তার ছেলেকে প্রথমে মেয়র হিসেবে চান, তিনি অনুমতি দেন। এবারও একইভাবে ছেলেকে উপজেলা চেয়ারম্যান করার অনুমতি দিয়েছেন। এটা তার কৌশল।’
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র পদ থেকে সদ্য পদত্যাগী ও চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম হাসনায়েন রাসেল বলেন, উপজেলার সকল নেতাকর্মী এমপি সাহেবের বাড়িতে গিয়ে আমাকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করতে অনুরোধ করেছেন, এভাবেই জনগণের চাপেই আমি প্রার্থী হয়েছি। আপাতত উপজেলা নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত আসি।
ছোট ভাই শাকিল পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তো জনগণ নিয়ে থাকি জনগণ যদি চাই তাহলে হবে। যদি আমাদের দ্বারা ভালো কিছু পেয়ে থাকে তাহলে তো জনগণ আমাদেরকে বেঁছে নেবেই। জনগণ যেটা মেনে নেবে সেটার বাইরে তো আমরা কিছু করতে পারবো না।
এ বিষয়ে পাবনা–৩ আসনের এমপি মকবুল হোসেন বলেন, ‘উপজেলার সকল ইউনিটের নেতাকর্মী আমার বাড়িতে এসে রাসেলকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে চেয়েছে– আমি বাধ্য হয়ে তাদের বলেছি– তোমরা যেহেতু তাকে প্রার্থী হিসেবে চাচ্ছো তাহলে নেও। কিন্তু আমি কাউকে কিছু বলতে পারবো না। ছোট ছেলেকে মেয়র পদে নির্বাচন করার মন চাইবে না, কারণ দুই ছেলেই যদি জনপ্রতিনিধি হয় তাহলে সংসার দেখবে কে?’
এজে/দীপ্ত সংবাদ