পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, পুলিশ শুধু আইন প্রয়োগ না করে জনগণের অধিকার রক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধ বজায় রাখতে দায়িত্ব পালন করলে এই বাহিনীর প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হবে।
তিনি বলেন, পুলিশকে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনগণের সেবক হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।
আইজিপি বলেন, ‘জনতার পুলিশ’ মানে শুধু একটি পরিচয় নয়–এটি একটি দর্শন, যা নিরাপত্তার সঙ্গে জনমনে আস্থা, শ্রদ্ধা ও সম্মান গড়ে তোলে। তিনি বলেন, ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে–অস্ত্র নয়, জনগণের আস্থা অর্জনই পুলিশের প্রকৃত শক্তি। পুলিশ যদি সত্যিকার অর্থে জনগণের পাশে থাকে, তবে তারা ‘ভয়ের প্রতীক’ নয়, বরং হয়ে ওঠে ‘ভরসার আশ্রয়’।
বৃহস্পতিবার (১ মে) রাজধানীর রাজারবাগে পুলিশ অডিটোরিয়ামে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, পুলিশ ও জনতার সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করতে হলে উদার মনোভাব, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, পুলিশ শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ নয়, সমাজেরও অংশ। যদি পুলিশের সঙ্গে জনতার বিভক্তি তৈরি হয়, তাহলে তা রাষ্ট্র ও সমাজের বিভক্তিতে রূপ নেয়। এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ গণতন্ত্র।
তিনি বলেন, আমাদের বুকে হাত দিয়ে স্বীকার করতে হবে, পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। পুলিশের যে পজিশনে থাকার কথা ছিল সে পজিশনে নেই। পুলিশ যেই আইনে চলে সেখানে পদে পদে সমস্যা আছে। এসব বিষয়ের ওপর মাঝে মধ্যে আলোচনা করা উচিত।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক আইজিপি মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, এত বড় একটা অভ্যুত্থানের একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীনতার পর। কিন্তু সঠিকভাবে আমরা এগোতে পারিনি, আমরা ব্যর্থ হয়েছি। একটা সম্ভাবনার ধার উন্মোচিত হয়েছে, স্বপ্ন যেন ব্যর্থ না হয়। সেজন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ২০০৯ থেকে ২৪ পর্যন্ত আমরা যা দেখলাম তা কল্পনা করা যায় না, ধারণা করা যায় না। আগেও গণতন্ত্র ছিল না কিন্তু আমরা সেবা দিতে পেরেছি কিন্তু গত ১৫ বছরের মতো আমরা দারোয়ানে পরিণত হইনি।
২০০৯ সালের নির্বাচনে যে খুব নিখুঁত হয়েছে তা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব না। তার পরবর্তী তিনটা নির্বাচনে যা হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। যখন একচ্ছত্র ক্ষমতা এসে যায় তখন প্রশাসন ভেঙে পড়ে।
এটা ভয় খুন–গুম ওর সন্ত্রাস দ্বারা সম্ভব হয়েছে। এই সময়টাতে শুধু এক শ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তা না সকল সেক্টরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা অতি উৎসাহিত হয়ে কাজ করেছে।
সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা পুলিশ সংস্কার প্রসঙ্গে বলেন, সংস্কার কমিশন পুলিশের বিষয়ে বলছে অনেক বিষয় পরীক্ষা নিরীক্ষা দরকার। পরীক্ষা–নিরীক্ষা যদি দরকার এই কথা বলা হয় তাহলে এই সংস্কার কমিশনের কি দরকার। এই পুলিশ কমিশন ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন নিয়ে কিছু বলে না, গন্ডগোল কিন্তু ওইখানেও আছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা যদি না থাকে তাহলে পুলিশ কীভাবে কাজ করবে।
তিনি বলেন, পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কিন্তু ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এটা বদলানো পুলিশের হাতে নেই। পুলিশের অনেক অফিসাররা দুর্নীতিতে জড়িয়েছে। আমাকে একজন আইজিপি বলেছিলেন ঘুষ খাওয়ার থেকে শ্বশুরবাড়ি থাকা ভালো।
পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি গোলাম রসুল সমাপনী বক্তব্য রাখেন। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগরের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর, অধ্যাপক সাজ্জাদ সিদ্দিকী, এপেক্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য অধ্যাপক চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান প্রমুখ।
এজে/ইএ/দীপ্ত সংবাদ