রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
রবিবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৪

পরিবেশ বাঁচাতে অবৈধ স্মার্ট পণ্য আমদানিতে কঠোর পদক্ষেপ দাবি

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ: সর্বশেষ সম্পাদনা:

দেশে প্রতিবছর সৃষ্টি হচ্ছে ৩০ লাখ মেট্রিকটন ইবর্জ্য। যার মধ্যে শুধু স্মার্ট ডিভাইসেই সৃষ্টি হচ্ছে সাড়ে ১০ কেজি টন ইবর্জ্য। অন্তত ২ লাখ ৯৬ হাজার ৩০২ ইউনিট নষ্ট টেলিভিশন থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ১.৭ লাখ টনের মতো ইবর্জ্য। জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প থেকে আসছে ২৫ লাখ টনের বেশি। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এই বর্জ্য বাড়ছে ৩০ শতাংশ হারে।

হিসাব বলছে, ২০২৫ সাল নাগাদ কোটি টনের ইবর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হবে বাংলাদেশ। ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে বিলিয়ন ইউনিট স্মার্ট উৎপাদন হবে। কম্পিউটার পিসিবিভিত্তিক ধাতু রূপান্তর ব্যবসায় সম্প্রসারিত হবে। যা ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট। সঙ্কট নিয়ন্ত্রণে ইবর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার সঙ্গে দেশ থেকে দেশে প্রবেশ করা রিফার্বিশ ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমদানি বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন।

শনিবার (৩ জুন) বিকেলে বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের (বিআইজএফ) উদ্যোগে রাজধানীর প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁওএ অনুষ্ঠিত ‘ইবর্জ্যের কার্বণ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ: কারণ ও উত্তরণের পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আখতার হোসেন। উপস্থাপনায় তিনি বলেন, বর্জ্যের কোনো গাইডলাইন নেই। অভিভাবকহীন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে একটি ইবর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতিমাল তৈরি করা দরকার। আগামী ১৪ অক্টোবর ২০২৩ সাল থেকে আমরা এই বিআইজেএফ এর পতাকা তলে সবাইকে নিয়ে দেশজুড়ে আন্তর্জাতিক মানের ইবর্জ্য সচেতনতা দিবস পালন করব। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা একটি ইবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় হ্যাকাথন করতে চাই।

স্বাগত বক্তব্যে ইবর্জ্যের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যত প্রজন্মকে এর ভয়াবহতা থেকে রক্ষায় বিআইজেএফ এর নেয়া এই উদ্যোগ আগামীতে আরো জোরদার করা হবে বলে জানান বিআইজেএফ সভাপতি নাজনীন নাহার।

গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সময়ের সঙ্গে খুবই প্রাসঙ্গিক। এজন্য সচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপশি ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিষ্ট একটি কর্তৃপক্ষ থাকা দরকার। এটা বাস্তবায়নে বিআইজেএফ প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।

সার্ক সিসিআই (বাংলাদেশ) নির্বাহী কমিটির সদস্য শাফকাত হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি’র স্পেকট্রাম বিভাগের উপপরিচালক প্রকৌশলী মোঃ মাহফুজুল আলম, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, র‌্যাবএর আইন ও মিডিয়া শাখার পরিচালক খন্দকার আলী মঈন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের উপসচিব সাঈদ আলী, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) উপপরিচালক (ঢাকা বিভাগ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সিইআরএম পরিচালক রওশন মমতাজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোবোটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল।

এছাড়াও আলোচনায় অংশ নিয়ে ইবর্জ্য নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি শহীদ উল মুনির, গ্লোবাল ব্র্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেড চেয়ারম্যান আব্দুল ফাত্তাহ, স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, জেআর রিসাইক্লিং/সলিউশন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হোসেন জুয়েল, এইচপি বাংলাদেশ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার (ভোক্তা পিএস) কৌশিক জানা, আসুস বাংলাদেশ এর কান্ট্রি প্রোডাক্ট ম্যানেজার আসাদুর রহমান সাকি, লেনোভো ভারত এর আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক ব্যবসা) সুমন রায়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজমুস সালেহীন, ইউসিসি’র হেড অব সেলস শাহীন মেল্লা, স্মার্ট টেকনোলজিসের সেলস ডিরেক্টর মুহাহিদ আল বেরুনী সুজন।

সভায় ইবর্জ্য ঝুঁকি থেকে বাংলাদেশকে স্মার্ট হিসেবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে সরকারিবেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বে কালবিলম্ব না করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা। বক্তাদের পরামর্শ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে এনে বিআইজেএফ আগামীতে স্মার্ট সংবাদিকতায় ভূমিকা পালন করবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে গোল টেবিল আলোচনায় উপস্থিত সকেলের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাব্বিন হাসান।

অধ্যাপক লাফিফা জামাল বলেন, আজকের ইলেকট্রনিক্স পণ্যেই আগামী দিনের ইবর্জ্য। ল্যাপটপকম্পিউটারের চেয়ে কিবোর্ড, মাউস থেকে ইবজ্য বেশি হচ্ছে। তাই এগুলো কোথায় ফেলতে হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। ২০২২ সালের ইবর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিধিমালা অনুযয়ী, এসব পণ্য যারা উৎপাদন করবেন তাদেরই ফিরিয়ে নেয়ার বিধান থাকলেও তা প্রতিপালিত হচ্ছে না। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার ।

ডিএনসিআরপি উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার বলেন, ব্যাটারিচালিত গাড়ি থেকে দেশে ভয়াবহমাত্রায় সিসা ছড়াচ্ছে। তাই সবার আগে উৎপাদকদের দায়বদ্ধতার মধে আনতে হবে। এ বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের চাপের মুখে রাখতে বিআইজেএফ সমাজের আয়না হিসেবে পরিচিত গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সিইআরএম পরিচালক রওশন মমতাজ বলেন, আমরা বুয়েট থেকে ইবর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করে ইবর্জ্য আইন ২০০১ এর একটি খসড়া করা হয়েছে। রিইউজ মনেই ইবর্জ্য নয়। তাই আমি একে ইরিসোর্স হিসেবে অভিহিত করতে পারি। এজন্য এটি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনাটা এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। জাপান রিসাইকেল ইবর্জ্য দিয়ে গোল্ড মেডেল তৈরি করতে চায়। হাইটেক পার্কে যদি রিসাইকেল প্লান্ট করা হয় তবেই এটি সম্পদ হিসেবে উপযোগ সৃষ্টি করবে।

র‌্যাবএর আইন ও মিডিয়া শাখার পরিচালক খন্দকার আলী মঈন খন্দকার আল মঈন বলেন, সব স্টেক হোল্ডারদের সমন্বিত উদ্যোগ নিলে ইবর্জ্য ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। দেশে ব্যাগেজ পণ্যের চাহিদা রয়েছে। আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে একই ব্যক্তিকে চার বারও আটক করার পর তিনি একই ব্যবসা করছেন। আপনারা তথ্য দিলেই তদন্ত করে এই অভিযান অব্যাহত রাখবেন।

স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, বর্জ্যকে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইরিসোর্স এ রূপান্তর ব্যবসায়ীক ভায়াবল না। আমাদের ইন্টারনাল ইওয়েস্ট ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবছি। তখন বাইরের দেশ থেকে ইবর্জ্য বাংলাদেশে ডাম্পিং করা হচ্ছে। পাকিস্তান ভিত্তিক কিছু ব্যবসায়ী বাংলাদেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই কাজ করছে। প্রতি মাসে ১৫১২ হাজার রিফারবিশ ল্যাপটপ বাজারে ঢুকছে। এতে করে সরকার ৩০৩১ কোটি টাকার মতো রাজস্ব পেতো।

গোলটেবিল বৈঠকে খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আল/দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More