চাল, আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের মতো মৌলিক প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো; সরবরাহে ঘাটতি। আর এই ক্ষেত্রে পণ্যের দাম নির্ধারণে প্রধান ঝুঁকিবহনকারী হচ্ছেন কৃষকরা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, সরবরাহে ঘাটতি সাধারণত মৌসুমের বাইরের সময়ে ঘটে এবং এর পেছনে রয়েছে লাভজনক অন্য ফসলের কারণে জমির ব্যবহার পরিবর্তন, বন্যার প্রভাব, ও পোকার আক্রমণের পরিমাণ বৃদ্ধি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষক বা উৎপাদকরাই মূল ঝুঁকিবহনকারী; কারণ তারা সরবরাহ, চাহিদা, প্রতিযোগিতা এবং উৎপাদন খরচের ওপর নির্ভর করে কখনো লাভ করে, আবার কখনো ক্ষতির মুখোমুখি হন।
অন্যদিকে, মধ্যস্থতাকারীরা সাধারণত পণ্যের দামে তাদের খরচ ও মুনাফা যোগ করে পরবর্তী পর্যায়ে বিক্রি করে, বলেছে গবেষণা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট মো. সেলিম আল মামুন বলেন, আমাদের জরিপে দেখা গেছে কৃষক ও উৎপাদকরাই প্রধান ঝুঁকিবহনকারী। তারা কখনো লাভ করেন, আবার কখনো ক্ষতির সম্মুখীন হন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সিজনের অন্য সময়ে যখন পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিকভাবে কমে যায়, তখন আমদানির মাধ্যমে মূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব।
সরকার চাইলে নির্দিষ্ট সময়ের আগে আমদানি শুল্ক কমিয়ে বা তুলে দিয়ে দেশীয় উৎপাদকদের ক্ষতি না করে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
এই গবেষণা যৌথভাবে পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং চিফ ইকোনমিস্ট ইউনিট। ১৪ জেলায় চাল, আলু, পেঁয়াজ, ডিম ও ব্রয়লার মুরগি—এই পাঁচটি মৌলিক কৃষিপণ্য নিয়ে এই জরিপ পরিচালিত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, চাল ও ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষকরা উল্লেখযোগ্য মুনাফা করেন, যেখানে মধ্যস্থতাকারী ও পাইকাররা তুলনামূলকভাবে কম মুনাফা পান।
দাম নির্ধারণে চালকল মালিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা ধান ও চালের বাজারের সরবরাহ ও চাহিদা অনুযায়ী, এবং মিলের খরচের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করেন এবং চাল ও অন্যান্য উপকরণ বিক্রি করে লাভ করেন।
বড় পাইকাররা– যাদের সাধারণভাবে আড়তদার বলা হয় এবং চালের খুচরা বিক্রেতারা, গ্রামীণ ও শহুরে বাজারে, মূলত চাহিদা, সরবরাহ ও প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে দাম ঠিক করেন।
গবেষণায় আরও বলা হয়, ধান ও চালের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিলে, বিশেষ করে মিলার ও আড়তদারদের ক্ষেত্রে একটি নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছ মূল্যসীমা নির্ধারণ এবং মজুতের নিবিড় পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।
বন্যা, অতিরিক্ত পোকার আক্রমণ, সার ও কীটনাশকের উচ্চমূল্য, বিদ্যুৎ, শ্রম ও মজুরির দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়ছে, জানায় প্রতিবেদনটি।
মধ্যবর্তী পর্যায়ে পরিবহন ও শ্রম ব্যয় বৃদ্ধিও চালের দামে প্রভাব ফেলছে।