দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী–৩ (সোনাগাজী–দাগনভূঞা) আসনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগ–জাতীয় পাটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্রভাবে ১৪জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
কিন্তু গত ৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাছাই–বাছাইয়ে বিভিন্ন ত্রুটি থাকায় ৭জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ও ৭ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার। অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীতা ফিরে পেতে অনেকে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন।
তবে মনোনয়নপত্র যাছাই–বাছাইয়ের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পাটির হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে হাট–বাজারে চুল ছেড়া বিশ্লেষনের পাশাপাশি চায়ের দোকানে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এবার এই আসনে শেষ পর্যন্ত কে থাকছেন নৌকা নাকি লাঙ্গল? তবে উপজেলার সর্বত্র গুণজন রয়েছে এবারও কি সরকার দলের সমর্থন নিয়ে নৌকার পরিবর্তে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে বর্তমান সংসদ সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী প্রার্থীতা পাচ্ছেন?
দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে পেছনে ফেলে চতুর্থবারের মতো নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন যুবলীগের সাবেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও বায়রা সভাপতি মো. আবুল বাশার। ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথম বারের মতো নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি বিএনপির ধানের র্শীষের প্রার্থী প্রয়াত মো. মোশাররফ হোসেনের কাছে প্রায় ৪০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে ছিলেন।
এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও আবুল বাশার নৌকার টিকেট পেয়েছিলেন। পর পর দুবার দলীয় ভাবে আসনটি মহাজোটকে ছেড়ে দেয়ায় তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। এবারও দলীয় মনোনয়ন যুদ্ধে টিকে যাওয়ার পরও দুশ্চিন্তা যেন তাঁর কাটছে না। আবারো কি তিনি চূড়ান্তভাবে দলীয় মনোয়ন পাচ্ছেন না। উভয় প্রার্থী দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ স্থানীয় জনগণের সঙ্গে ব্যাপক হারে দেখা সাক্ষাৎ করছেন।
গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোটগত ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় শরীক দল জাতীয় পার্টিকে ফেনী–৩ আসন ছেড়ে দেয়ায় মহাজোট প্রার্থী হয়ে জয় লাভ করেন জাতীয় পাটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। এবারও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে আবুল বাশার নৌকার টিকেট পেলেও স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের ধারণা আওয়ামী লীগ এ আসনটি আবারও জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে পারেন।
আর এ নিয়ে চলছে নানামূখী জল্পনা–কল্পনা। যদিও উভয় প্রার্থী নিজ নিজ দলের দলীয় সিদ্ধান্তকে শেষ পর্যন্ত প্রাধান্য দিবেন বলে জানিয়েছেন। এ নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় উভয় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সরকার দলীয় সমর্থন নিয়ে কে মাঠে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হয়ে আসছেন তাঁর অপেক্ষায় উভয় দলের নেতাকর্মীরা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যে যার মতো করে স্বয়ে, রয়ে মাঠে অবস্থান করছেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আশায়।
তবে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বিষয়ে একক সিদ্ধান্তের জন্য আগামী ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সোনাগাজী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হক হিরন দীপ্ত নিউজকে বলেন, তাঁরা চান এবার ফেনী–৩ আসনে নৌকায় ভোট দিতে। তাঁদের প্রত্যাশা গত তিনবার এ আসনটি মহাজোটকে ছেড়ে দেয়া হলেও,এবার তা হবে না। তাঁরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। ভোটাররাও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে অধির আগ্রহে রয়েছেন। এরপরও এবার যেন ফেনী–৩ আসনে নৌকার প্রার্থীকে সংসদ সদস্য বানাতে সুযোগ দিতে তিনি দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দলীয় নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে জোর দাবী জানান।
অপরদিকে উপজেলা জাতীয় পাটির সভাপতি আবু সুফিয়ান প্রতিবেদককে বলেন, জাতীয় পার্টিসহ সাধারণ জনগণ চায় গত বারের মত এবার যাতে করে এ আসনটি লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীকে ছেড়ে দেয়া হয়। তিনি আশা করছেন এবারও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন।
নৌকাকে মানুষ ভোট দিতে মুখিয়ে আছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. আবুল বাশার বলেন, ‘আমি আগে বার বার নৌকার টিকেট পেয়েও সর্বশেষ দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে নিজেকে নির্বাচন থেকে সরে নিয়েছি। এবার আশা করি তা হবে না। এ আসনে নৌকাকে মানুষ ভোট দিতে উম্মূখ হয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন।
বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী দীপ্ত নিউজের প্রতিবেদককে বলেন, দল যে সিদ্ধান্ত দিবেন সে অনুযায়ী নির্বাচনী মাঠে আমরা কাজ করবো। আশা করি, মহাজোট না এককভাবে আমরা নির্বাচন করবো তা সময় বলে দেবে। সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ফেনী–৩ আসনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাছাই–বাছাইকালে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. আবুল বাশার, বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির তবারক হোসেন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট নিজাম উদ্দিন, জাকের পাটির আবুল হোসেন, ইসলামীক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মো. আবু নাসির, স্বতন্ত্র সাবেক সংসদ সদস্য রহিম উল্যাহর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে।
আরও পড়ুন: জাপার সাথে জোট না করতে প্রধানমন্ত্রীকে রওশনের অনুরোধ
বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন, তৃণমূল বিএনপির আজিম উদ্দিন, সংস্কৃতিক মুক্তি জোটের জোবায়ের ইবনে সুফিয়ান, স্বতন্ত্র ইশতিয়াক আহমেদ, জেড.এম কামরুল আনাম, পারভীন আক্তার, আবুল কাশেম আজাদ ও রিন্টু আনোয়ার।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া ব্যক্তিরা প্রার্থীতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনের আপিল করেছেন। গত রোববার থেকে আপিল শুনানি শুরু হয়েছে। তবে আপিলকারী কতজন প্রার্থীতা ফিরে পেলেন ও কতজন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন এবং শেষ পর্যন্ত কতজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তা আগামী ১৭ ডিসেম্বর পরিস্কার হয়ে যাবে।
মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ