নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ১৭টি ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পদবঞ্চিত নেতাকর্মী মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।
একই দিনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় অবস্থিত মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন পদবঞ্চিতরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাব্বির আহমেদ সাগরের নেতৃত্বে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা সন্ধ্যা ৭টার দিকে কার্যালয়ে এসে তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় তারা ঘোষিত ওয়ার্ড কমিটি ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেয়। যোগ্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি করেন।
এ সময় তারা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন এবং তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি মনোয়ার হোসেন মনা বলেন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা কমিটির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। একইদিন বিকেলে শহরের দেওভোগ নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে অবাঞ্চিত ঘোষাণা করা হয়।
ওই সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে মেয়র আইভী বলেন, ‘এ ওয়ার্ডে আমাদের ছোটভাই এপন আর চঞ্চলকে নেতা বানায়া দিল। ওরা যদিও নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু আনোয়ার কাকা (মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি) প্রতিহিংসার মনোভাব নিয়ে এ কমিটি দিয়েছেন। তিনি দেওভোগকে বুঝিয়েছেন, উনি যা চাইবেন তা হবে এখানে। যে দেওভোগে পূর্বপুরুষরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের অসম্মানিত করেছেন তিনি। আজকে এখানে দাঁড়িয়ে দেওভোগের মানুষ হিসেবে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম আমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে কমিটি হয়নাই। কারণ সেটা এমপি শামীম ওসমানের এলাকা, তিনি বলেছেন তার এলাকা তার নিজের মত কমিটি করবেন। তাহলে বলতে চাই আমার নির্বাচনী এলাকার ২৭টি ওয়ার্ড। তাহলে কোন অধিকারে আমাকে না জিজ্ঞেস করেই ১৭টি ওয়ার্ডে কমিটি দেন? আমি ১৭টি ওয়ার্ডে পাল্টা কমিটি দেব। এক ওয়ার্ডের লোক এনে আরেক ওয়ার্ডে বসিয়েছে। এগুলো কি ছেলেখেলা নাকি? আমি দলের বিষয়ে কখনো মাথা ঘামাইতাম না। আজকে বাধ্য হয়েছি। আমি তো আর শামীম ভাইয়ের মত বলতে পারবো না, আমার এলাকায় এটা করতে পারবেন না। কিন্তু আমার মতামত না নিয়ে যদি কমিটি করেন, সিনিয়রদের অসম্মানিত করেন তাহলে পাল্টা কমিটি দেব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির মৃধা বলেন, ঘোষিত ওয়ার্ড কমিটিতে রাজাকারপুত্র, মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারীর পুত্রসহ বিতর্কিতদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে ত্যাগীদের বঞ্চিত করে রাজাকারপুত্র এমনকি মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারীর ছেলেকে শীর্ষ পদ দেয়া হয়েছে। এই কমিটি মানিনা। এ ব্যাপারে আমাদের নেতা শামীম ওসমানের হস্তক্ষেপ চাইব।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেন, ‘সভাপতিতে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তালা দেয়ার অধিকার কারও নেই। আমি অনুরোধ করব; যারা এ কাজ করেছেন তারা তালা খুলে দিবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে মহানগর আওয়ামী লীগের ১১ থেকে ২৭ নম্বর পর্যন্ত ১৭টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হয়। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা মহানগর আওয়ামী লীগের এই কমিটি ঘোষণা করেন। এরপরই শুরু হয় নেতাকর্মীদের ক্ষোভ।
গৌতম সাহা/ এজে/ দীপ্ত সংবাদ