নারায়নগঞ্জের চর সৈয়দপুর এলাকার প্রাপ্ত হাত–পা বাধাঁ অবস্থায় বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে পিবিআই এর নারায়ণগঞ্জ।
নিহত নারীর নাম অনন্যা কর্মকার (৩৫) ঝালকাঠি জেলার ডাক্তারপিট্ট গ্রামের মৃত হরে কৃষ্ণ কর্মকারের স্ত্রী বলে শনাক্ত করেছে পুলিশ। এ হত্যাকান্ডে জড়িত ২ জন আসামী গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যার দায় স্কীকার করে আদালতে আসামীরা স্বীকারােক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন– ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকার মো. জীবন (৩০) ও তার কথিত স্ত্রী নুসরাত জাহান মীম (৪০)।
সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে বিষয়টি এক সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেন পিবিআই এর নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার আল মামুন শিকদার।
পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মামলার প্রাথমিক তদন্তকালে হত্যাকান্ডের ঘটনায় আসামিদের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিমের নাম পরিচয় সনাক্ত করা হয়। এর আগে শনিবার (৩০ মার্চ) কুমিল্লা জেলা সদর দক্ষিণ থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গত রবিবার ৩১ মার্চ মামলার আসামিদেরকে আদালতে উপস্থাপন করা হলে আসামি মাে. জীবন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালতে এবং আসামি নুসরাত জাহান মীম সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাে. হয়দার আলীর আদালতে স্বীকারােক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, মামলার তদন্তে জানা যায় মামলার মূল ভিকটিম অনন্যা কর্মকার নারায়ণগঞ্জ সদর থানার চর সৈয়দপুরে স্বামী হরে কৃষ্ণর সাথে বসবাস করতেন। তার স্বামী একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে চাকরি করত। ভিকটিমের স্বামী অনুমানিক এক বছর পূর্বে মারা যায়। তাহার কোন সন্তান ছিলনা না। মামলার আসামি নুসরাত জাহান মীম তার স্বামীর সাথে যােগাযােগ না থাকায় সে তার ননদের সাথে চর সৈয়দপুরের বাসায় থাকত। ভিকটিম অনন্যাও চর সৈয়দপুরের তাদের পাশের বাসায় থাকত। সেই সুবাদে ভিকটিমের সাথে আসামি নুসরাত জাহান মীমের পরিচয় ঘটে এবং সুসম্পর্ক তৈরি হয়।
পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আসামি নুসরাত জাহান মীম ভিকটিম অনন্যা এবং মামলার প্রধান আসামি মো. জীবন ফতুলার শিবু মার্কেট এলাকায় বাসা ভাড়া নেয়। আসামি মাে. জীবন গান বাজনা করত, বিভিন্ন মাজারে মাজারে সুরে বেড়াত। সে নেশায় আসক্ত ছিল। ঘটনার দুই দিন আগে অর্থাৎ গত ২ মার্চ তারিখে দুপুর বেলা ভিকটিম অনন্যা বাথরুমে গোসল করতে গেলে আসামি মােঃ জীবন ভিকটিমের মোবাইল ফোন চেক করে ভিকটিমের কিছু কল রেকর্ড, মেসেজ দেখে বুঝতে পারে যে ভিকটিমের ভাই ভিকটিমকে আমেরিকা হতে ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়েছে। উক্ত বিষয় দেখে আসামি জীবন সরকার ভিকটিমের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি আটতে থাকে।
পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, গত ৪ মার্চ সকালে আড়াইহাজার থানা এলাকা হতে পালা গান শেষে বাসায় ফিরে সে। ঐদিন গ্যাসের চাপ কম থাকায় আসামি মােঃ জীবনের কথিত স্ত্রী আসামি মীম রান্না করতে পারে নাই। এই সুযােগে আসামি মাে. জীবন বাইরে থেকে নিজেদের এবং ভিকটিম অনন্যার জন্য খাবার কিনে নিয়ে আসে এবং সুযোগ বুঝে ভিকটিমের খাবারের সাথে উচ্চ মাত্রার ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। ভিকটিম সেই ঔষধ মিশ্রিত খাবার থেয়ে কিছুক্ষনের মধ্য অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এসময় আসামি মাে. জীবনের কথিত স্ত্রী মীম রান্না ঘরে খাবার প্লেট পরিষ্কার করতে যায়। সেই সুযােগে জীবন ভিকটিমের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য দুপুরে ভিকটিম অনন্যার রুমে প্রবেশ করলে ভিকটিম জীবনকে দেখে ফেলায় চিৎকার দিয়ে উঠে। আসামি জীবন সাথে সাথে ভিকটিমের বিছানায় থাকা বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, পরবর্তীতে ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তার কথিত স্ত্রী মীমকে গ্যাস লাইট নিয়ে আসতে বলে। মীম তার স্বামী জীবনের কথামত ডিকটিমের পায়ের আঙ্গুলে আগুন দিলে ভিকটিম নড়াচড়া না করায় তারা ভিকটিম এর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরপর প্লাস্টিকের বড় বস্তা কিনে নিয়ে ভিকটিমের হাত পা বেঁধে বস্তাবন্দি করে সৈয়দপুর এলাকায় ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জ গামী রাস্তার বাম পাশে ফেলে রেখে উভয়ে পালিয়ে যায়। মামলার পরবর্তী তদন্ত অব্যাহত আছে।
গৌতম / আল / দীপ্ত সংবাদ