সারা দেশের সঙ্গে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নওগাঁ ও তার আশেপাশের অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারী দাবদাহ। চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে নওগাঁর তাপমাত্রা ৩৫–৪০ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে।
এখন পর্যন্ত নওগাঁয় চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯.২ডিগ্রি সেলসিয়াস পরিমাপ করা হয়েছে বলে নওগাঁর বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে।
তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে জনজীবন। বৈশাখের শুরু থেকেই নওগাঁর তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। কখনোও তাপমাত্রা এক ডিগ্রি কমলে পরের দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে দুই ডিগ্রি। প্রতিদিন সকালে সূর্য ওঠার পর থেকেই তীব্র সোনালী রোদের দাপটে মানুষসহ প্রতিটি প্রাণীর হাঁসফাঁস অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। তীব্র গরমে নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। বোরো ধানের ক্ষেতসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে। তবুও বৃষ্টির দেখা নেই। এমন অবস্থায় আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করে
ইস্তিস্কার নামাজ আদায় করেছে নওগাঁর রাণীনগর, সাপাহার ও পত্নীতলা উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
বৃহস্পতিবার (২৫এপ্রিল) বিভিন্ন সময়ে জেলার রাণীনগর উপজেলার শের–এ বাংলা সরকারি মহাবিদ্যালয় মাঠে, সাপাহার উপজেলার সরফতুল্লাহ ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে ও পত্নীতলার নজিপুর পাবলিক মাঠে এই নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। তীব্র গরমে সূর্যের তাপ উপেক্ষা করে নামাজে স্থানীয় শত শত মুসল্লিরা অংশ নেন। নামাজ শেষে অনাবৃষ্টি এবং গরম থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর রহমত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। রাণীনগরের শের–এ বাংলা সরকারি মহাবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত নামাজ ও দোয়া পরিচালনা করেন জেলার মান্দা উপজেলার ঐতিহাসিক কুসুম্বা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোস্তফা আল আমিন। নামাযে উপজেলার বিভিন্ন বয়সের মুসল্লীরা অংশ নেন।
ইস্তিস্কার নামাজে আসা মুসল্লি ডা. রোস্তম আলী মন্ডল বলেন, সারা দেশের মতো রাণীনগর উপজেলায় অসহনীয় গরম পড়েছে। অনেকদিন ধরেই এক ফোটা বৃষ্টির দেখা নেই। তীব্র গরমে শুধু মানুষ নয় পশুপাখিরাও কষ্ট পাচ্ছে। এজন্য দুই রাকাত ইস্তিস্কার নামাজ আদায় করে বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছি।
নামাজ পড়ানো ইমাম খতিব মাওলানা মোস্তফা আল আমিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রচন্ড তাপপ্রবাহ, তার ওপর বৃষ্টি নেই। এতে জনজীবন কষ্টে রয়েছে সেই সাথে ফসল নষ্ট হচ্ছে। সকল শ্রেণী–পেশার মানুষের চলাফেরা, ইবাদত বন্দেগী করতেও সমস্যা হচ্ছে। একারণে আমরা আজ বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় করলাম। আল্লাহর কাছে চাওয়া তিনি যেন আমাদের নামাজ ও দোয়া কবুল করেন। সেই সাথে ইসলামী বিধিবিধান মেনে চলার বিষয়ে খুতবা দেন তিনি।
নওগাঁর বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান একখনই তাপমাত্রা কমার কোন সম্ভাবনা নেই। এমন তাপমাত্রা আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি জানান। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় নওগাঁর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে ৩৯.২ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা।
রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খাঁন অংকুর বলেন এখন পর্যন্ত নওগাঁয় হিট স্টোকে কোন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে এমন তাপদাহের কারণে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু ও বয়স্করা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আমরা হাসপাতালে আসা রোগীদের সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা প্রদান করছি। এমন দুর্যোগে জরুরী কোন কাজ ছাড়া ঘরের বাহিরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এসময় বেশি বেশি বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি করতে, তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে, মাঠে কাজ করার সময় নির্দিষ্ট সময় পর পর ছাঁয়ায় গিয়ে বিশ্রাম নেওয়া ও বাহিরে বের হলে অবশ্যই ছাতা কিংবা ছাঁয়া পাওয়া যায় এমন বস্তু সঙ্গে নেওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন তিনি। এছাড়া যদি কোন ব্যক্তি এমন তাপদাহে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন তাহলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন তিনি।
রিপন/ আল / দীপ্ত সংবাদ