মঙ্গলবার, নভেম্বর ১২, ২০২৪
মঙ্গলবার, নভেম্বর ১২, ২০২৪

শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে: এসইউবি’র সমাবর্তনে ডা.দীপু মনি

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, ভবিষ্যতের রূপকল্পের বাংলাদেশ গড়তে হলে ঔপনিবেশিক আমল থেকে চলা মুখস্থ নির্ভর আর পরীক্ষায় উগড়ে দেওয়া শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে চলবে না। বরং শিক্ষাকে আনন্দময় করতে হবে। সমস্যা সমাধানে দক্ষতা বাড়াতে হবে। আত্মশক্তিতে বলীয়ান হতে হবে।

বেসরকারি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের (এসইউবি) ষষ্ঠ সমাবর্তনে প্রধান অতিথির ভাষণে দীপু মনি এ কথা বলেন। বুধবার (৩০ নভেম্বর) রূপগঞ্জের কাঞ্চনে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও এসইউবি’র চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদের সম্মতিক্রমে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন এবং গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে সনদ বিতরণ করেন। এবার সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন দেশ বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে দীপু মনি এমপি বলেন, রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পবিবর্তন আনা হচ্ছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ এক্রেডিশেন কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। ন্যাশনাল ব্লেন্ডেড এডুকেশন মাস্টার প্লান চূড়ান্তকরণের পর্যায়ে রয়েছে। অবকাঠামোর পাশাপাশি শিক্ষায় প্রযুক্তির মেলবন্ধন করা হচ্ছে।

দীপু মনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুরুর সময় অনেকের মনে অনেক অনিশ্চয়তা ছিলো। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে শিক্ষার মানের দিক থেকে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অভিকর্ষতা অর্জন করেছে। স্টেট ইউনিভার্সিটি তেমনি একটি বিশ্ববিদ্যালয় যা মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে বদ্ধ পরিকর। এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ, বাজার চাহিদার সঙ্গে শিক্ষার যোগসূত্রতা, সচেতনতা ও মূল্যবোধসহ নানা বিষয়ে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে।

নতুন গ্র্যাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই ধরনের সমাবর্তনে আসলে আমার ভালো লাগে কারণ তারুণ্যের উচ্ছ্বাসটা টের পাই। তরুণরাই ভবিষ্যৎ। তারাই

নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। তিনি বলেন, স্বপ্ন দেখতে হবে। আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কথায় বলতে হয় আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের সমাজে আমরা একজন কৃষক বা শ্রমিককে বুদ্ধিজীবী বলি না, বলার কথা ভাবতেই পারি না, কারণ তাদের কায়িক পরিশ্রম সমাজ-নির্দিষ্ট বুদ্ধিজীবিতার সংজ্ঞায় পড়ে না। কিন্তু তারা যদি তাদের বুদ্ধি খাটিয়ে

ক্রমাগত খাদ্য এবং বস্তুসামগ্রী উৎপাদন করে না যেতেন, এই দেশটির বেঁচে থাকাই অসম্ভব হত। কোভিডে বিপর্যস্ত, ইউরোপে ঘটতে থাকা এক অবাস্তব যুদ্ধের অভিঘাতে দিশেহারা এই সময়ে বিদেশের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তার মোকাবেলা করার জন্য এখন দেখতে পাচ্ছি সবাই কৃষকদের, শ্রমিকদের এবং কৃষকদের যেসব সন্তান বিদেশে অমানুষিক কায়িক পরিশ্রম করে বিদেশী মুদ্রা পাঠায়, তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।”
দেশের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের নিরলসভাবে সততার শক্তি নিয়ে কাজ করে যাওয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তরুণদের উদ্দেশে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, এই মানুষদের কাছ থেকে আত্মশক্তির পাঠটা গ্রহণ করুন। নি:শব্দে, লক্ষ্য স্থির করে, নিজের সঙ্গে কোনো বিবাদে না জড়িয়ে, শুধু এগিয়ে যান। আত্মশক্তিতে বলিয়ান হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ডা. এ এম শামীম তাঁর বক্তব্যে বলেন, যোগাযোগে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে হবে। বড় মানুষ হবার স্বপ্ন দেখতে হবে। স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সৎ থাকতে হবে। বাবা-মাকে সম্মান করতে হবে। পৃথিবীর যেখানেই কাজ করো দেশকে ভালোবাসতে হবে। মানুষকে ভালবাসতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আনোয়ারুল কবির বলেন, আমরা একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ আর চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে সামনে রেখে যেমন শিক্ষা ব্যবস্থা সাজিয়েছি তেমনি ভুলে যাইনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় চেতনার ইতিহাস

ঐতিহ্যের কথা। আমাদের শিক্ষার্থীরা গুগলসহ সব জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি আমাদের জন্য গর্বের। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, দেশ তোমাদের কী দিল তার চেয়ে বেশি তোমরা দেশকে কী দিলে সেটা মনে রাখ। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য দেন সোহেলী আক্তার সেতু। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, স্টেট ইউনিভার্সিটি জ্ঞান ও দক্ষতায় আমাদের যোগ্য করে গড়ে তুলেছে। আমরা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত। সব গ্রাজুয়েটদের পক্ষ থেকে তিনি অতিথি, শিক্ষকসহ সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।

২০০২ সালে স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এবারের ৬ষ্ঠ সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অনুষদের মোট এক হাজার ৮২৫ জন ছাত্র-ছাত্রীকে সনদ প্রদান করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শীতা ও ফলাফল অর্জনকারী মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়। এর মধ্যে চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেলী আক্তার সেতু, জার্নালিজম, কমিউনিকেশন এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ খান। এছাড়া ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন সাত জন এবং ডীনস্ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ৫৫জন।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ডা. নওজিয়া ইয়াসমীন, রেজিস্ট্রার ড. সাজিদ বিন দোজা, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য, তিন অনুষদের ডীন, শিক্ষক, কর্মকর্তা, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকবৃন্দ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More