বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির নানা চড়া–উৎরাইয়ের বছর ছিল ২০২৩। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে, সরকার বিরোধীদের আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের আগ্রহ।
রাজনৈতিক কর্মসূচির সময় ঘটেছে সহিংসতা। তারপরও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সাফল্য দেখেছে দেসবাসী।
বছরজুড়ে মাঠের রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চলে আন্দোলন। বিপরীতে আ.লীগের পাল্টা কর্মসূচিতে সরগরম ছিল দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ও মানবাধিকার নিয়ে সরব হয় যুক্তরাষ্ট্র। ১০ এপ্রিল ২০২৩ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কনের বৈঠক হয়। এতে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলেন ব্লিঙ্কেন।
একই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও ঢাকায় ব্যস্ত সময় পার করেন। ১৩ নভেম্বর ২০২৩ রাজনৈতিক দলগুলোকে পূর্বশর্ত ছাড়া সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি পাঠান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। কিন্তু ব্যর্থ হয় এই চেষ্টা।
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে, মে মাসে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে ওয়াশিংটন। বলা হয়, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দিলে, এই নীতির আওতায় পড়বেন সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা। একই অবস্থা হবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি নিয়ে ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডাকে বিএনপি। ওই দিন মাঠে ছিল আ.লীগও। কিন্তু বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। ঘটে ব্যাপক সহিংসতা।
হামলা হয় প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনে, পুলিশ লাইনস হাসপাতালে পোড়ানো হয় কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স। সহিংসতায় এক পুলিশ সদস্যসহ দুইজন নিহত হন। মহাসমাবেশ করতে না দেওয়ার অভিযোগে, সাড়ে তিন বছর পর হরতাল ডাকে বিএনপি। এতে জামায়াতে ইসলামি সমর্থন দেয়।
১৫ নভেম্বর ২০২৩ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৭টি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সমঝোতার পর ২৬ আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আ.লীগ। বিএনপির সাবেক নেতাদের নেতৃত্বে কয়েকটি দল গজিয়ে উঠেছে। এসব দল ”কিংস পার্টি” নামে পরিচিতি পেয়েছে।
বছর জুড়েই নিত্যপণ্যের ঊধ্বমুখী দামের কারণে হিমশিম খেতে হয় সাধারণ মানুষকে। ডলার সংকটে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায়, চাপে পড়ে অর্থনীতি। অভিযোগ ওঠে ব্যাংক খাতে অনিয়মের।
২০২৩ সালে দেশে বড় কয়েকটি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ৪ এপ্রিল ভোরে রাজধানীর বঙ্গবাজারে অসংখ্য দোকান পুড়ে যায়। ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্ষতি হয়েছে এক হাজার কোটি টাকার বেশি।
১৫ এপ্রিল ভোরে নিউ মার্কেট এলাকার নিউ সুপারমার্কেট ও ২৬ অক্টোবর মহাখালীর খাজা টাওয়ারে আগুন লাগে।
৫ মার্চ সায়েন্স ল্যাব এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে তিন জন নিহত ও ৪০ জন আহত হয়।
বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়। সেখানে বিভিন্ন ব্যক্তির খাওয়া–দাওয়ার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তখন ডিবি কার্যালয়কে অনেকে ”ভাতের হোটেল” হিসেবে আখ্যা দেয়।
নানা সমস্যার মধ্যেও ২০২৩ সালে এগিয়ে চলে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড। সরকারের নেওয়া মেগা প্রকল্প হিসেবে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন ও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করেন সরকার প্রধান।
এসএ/দীপ্ত নিউজ