সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ তার বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্যও বেশ আলোচিত। এক সময় তিনি ছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী এবং এখন তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় তিন হাজার কোটি মার্কিন ডলার। ৬০০ বছরের বেশি পুরনো রাজবংশের উত্তরাধিকারী সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ উত্তরাধিকার সূত্রেই বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অনেকগুলো বিলাসবহুল হোটেলের মালিক সুলতান। এছাড়াও এসব দেশে বিপুল ভূ-সম্পত্তিরও মালিকানা রয়েছে তার।
সুলতানের দুইজন স্ত্রী এবং ১১ জন সন্তান। বিশাল প্রাসাদ, বিভিন্ন দেশে পাঁচ-তারা হোটেল, সোনায় মোড়ানো রোলস্রয়েস, হাজারো গাড়ির বহর, সোনার প্রলেপ দেয়া বোয়িং, মহামূল্য চিত্রকর্মের বিশাল সংগ্রহ, পোলো খেলা- হাসানাল বলকিয়াহর পরিচয়ের সাথে এসব বিষয় যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।
ব্রুনাইয়ের দারুসসালামে অবস্থিত সুলতানের প্রাসাদ ইস্তানা নুরুল ইমান আকারে ভ্যাটিকান বা বাকিংহাম প্রাসাদের চাইতে অনেকগুণ বড়। গিনেস বুক অব রেকর্ডস অনুযায়ী এটি বিশ্বের সবচাইতে বড় প্রাসাদ। এই প্রাসাদে কক্ষের সংখ্যা ১৭০০।
হাসানাল বলকিয়াহর রয়েছে এক বিশাল গাড়ির বহর। বলা হয়ে থাকে তার বহরে সাত হাজারের মত গাড়ি আছে, যার মোট মূল্য ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। তার গ্যারেজের সংখ্যা ১১০টি।
বহরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বাহন তার সোনায় মোড়ানো রাজকীয় রোলস্রয়েস। বিশেষ ডিজাইনের রোলস্রয়েসের ছাদ খোলা এবং পেছনে ছাতা সংযুক্ত করা।
এতে চেপে তিনি নিজে যেমন শহর পরিভ্রমণ করেন, তেমনি রাজপরিবারের সদস্যদের বিয়েশাদীর অনুষ্ঠানের পর প্রথা অনুযায়ী প্রজাদের দর্শন দিতেও ব্যবহার হয় এই গাড়ি। এটি ছাড়াও মোট ৬০০টির মত রোলস্রয়েস গাড়ির মালিক সুলতান।
ধারণা করা হত, নব্বইয়ের দশকে বিক্রি হওয়া বিশ্বের অর্ধেক রোলস্রয়েসের মালিক সুলতান এবং তার পরিবার। এছাড়া কয়েকশ’ ফেরারি গাড়ি আছে তার। এর বাইরে ল্যাম্বরগিনি, পোর্সেসহ দুর্লভ এবং লিমিটেড এডিশন গাড়িরও লোভনীয় বহর আছে সুলতানের।
সুলতানের প্রাইভেট জেট বহরে আছে বোয়িং ৭৪৭-৪০০, বোয়িং ৭৪৭-২০০ এবং একটি এয়ারবাস বিমান। বিমান বহরের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বোয়িংটি সোনার প্রলেপ দেয়া, যাকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘উড়ন্ত প্রাসাদ’ বলে অভিহিত করা হয়।
সুলতান হাসানাল বলকিয়ার রয়েছে বহুমূল্য চিত্রকর্মের বিশাল সংগ্রহ। এর মধ্যে পাবলো পিকাসো এবং পিয়ের-অগস্ত্য রেনোয়াঁর একাধিক আসল চিত্রকর্মের মালিক তিনি।
তার ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে এসেছিলেন ‘কিং অব পপ’ খ্যাত মাইকেল জ্যাকসন। বলা হয়ে থাকে সেই অনুষ্ঠানের জন্য মাইকেল জ্যাকসনকে সাত মিলিয়ন ডলার পারিশ্রমিক দেয়া হয়েছিল। এছাড়া সুলতান ঘোড়া পছন্দ করেন এবং পোলো খেলতে ভালোবাসেন।
তিনি ফ্যাশনেবল পোশাক পরতে পছন্দ করেন। তার ব্যক্তিগত পরিচর্যার ব্যয়ও বিপুল। দ্য টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সুলতানের চুল কাটার জন্য তার নিজের মালিকানাধীন ব্রিটেনের দ্য ডরচেষ্টার হোটেলের একজন নাপিত নিয়মিত বিমানের প্রথম শ্রেণীতে চেপে উড়ে যান ব্রুনাই।
বিমান ভাড়া এবং অন্যান্য খরচ বাদে তার পারিশ্রমিক কুড়ি হাজার মার্কিন ডলার এবং ওই নাপিতকে প্রতিবার নগদ অর্থে পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়।