দলে দলে সমাবেশে যাচ্ছেন নেতা-কর্মীরা
রংপুরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে আজ শনিবার দুপুরে শুরু হবে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। শুক্রবার রাত থেকে দলে দলে সমাবেশস্থলে জড়ো হচ্ছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। অনেকে গত বৃহস্পতিবার এসে সমাবেশস্থল ও আশপাশ এলাকায় অবস্থান করছেন।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) ভোর থেকে রংপুর মহানগরীর প্রবেশমুখ মাহিগঞ্জ সাতমাথা, মেডিকেল মোড়, টার্মিনাল রোডসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মিছিল নিয়ে আসতে দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রধান সড়কগুলোতে খণ্ড খণ্ড মিছিলের চাপ বাড়ছে, বাড়ছে স্লোগানের প্রতিধ্বনিও।
শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রংপুর মোটর মালিক সমিতির ডাকা ‘দাবি আদায়ের’ পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এর ফলে বিভাগের আট জেলা ধর্মঘটের কারণে বাস চলাচল বন্ধ। শুক্রবার সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা রংপুরে আসছেন। সেখানে আসা নেতাকর্মীদের জন্য নগরীর ২০টি স্কুল মাঠে অস্থায়ী প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। এসব প্যান্ডেলে অবস্থান করছেন দলটির কয়েক হাজার নেতাকর্মী।
লালমনিরহাটের বড়বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক অটোরিকশায় করে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি বিএনপির নেতা-কর্মী সকাল ৮টার দিকে রংপুর শহরে প্রবেশ করেন। তাদের মুখে বিভিন্ন স্লোগানের পাশাপাশি হাতে ছিল ধানের শীষ আর বাঁশের লাঠিতে বাঁধা জাতীয় পতাকা। সারিবদ্ধভাবে একে একে অটোরিকশাগুলো সাতমাথা অতিক্রম করে পার্কের মোড়ে গিয়ে জমায়েত হয়। পরে সেখান থেকে বিশাল একটি মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলের দিকে যান তারা।
সরেজমিন সকালে দেখা যায়, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে আজ সকাল থেকে হেঁটে দলে দলে সমাবেশস্থলে জড়ো হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। দিনাজপুর জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিলে স্লোগান দিতে দিতে সমাবেশস্থলে এসেছেন।
নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন স্থানে গুলিতে দলের নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদসহ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার রংপুরে তাদের চতুর্থ বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে।
গণসমাবেশের প্রস্তুতির বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন বাধা, ধর্মঘট উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলে দলীয় নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। অনেকেই বুধবার রাত থেকেই রংপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার রাতেও অনেকে এসেছেন। আজ সকালের মধ্যে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে জনস্রোতে নেমেছে। আশা করছি কয়েক লাখ মানুষের জনসমাগমে সরকারের সকল বাধা ভেস্তে যাবে।
রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, নেতা-কর্মীরা বেলা ১১টার মধ্যে সমাবেশস্থলে চলে আসবেন। বিভিন্ন স্থান থেকে সমাবেশস্থলে আসার জন্য রওনা দেওয়া নেতাকর্মীদের নগরীর মর্ডান মোড়, সিও বাজার, বাস টার্মিনাল ও মেডিক্যাল মোড়ে পুলিশ বাঁধা প্রদান করছে। মিছিল করে সমাবেশে আসা যাবে না জানিয়ে নেতাকর্মীদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।
শুক্রবার ভোর থেকে চলছে পরিবহন মালিক সমিতির ডাকা বাস ধর্মঘট। আজ দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকাগামী বাসসহ আন্তজেলায় কোনও বাস চলছে না। বন্ধ রয়েছে ট্রাক, মিনিবাস, মাইক্রোবাস। রংপুরের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ধর্মঘট চললেও বিভাগের আট জেলা বিশেষ করে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটের বিভিন্ন উপজেলা থেকে ট্রাক-বাস ভাড়া করে এবং ট্রেনে রংপুরে এসে পৌঁছেছেন বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী।
দুপুর ২টায় রংপুরের ঐতিহাসিক কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে বিএনপির গণসমাবেশ শুরু হবে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এদিকে গণসমাবেশে যোগ দিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ইতোমধ্যে রংপুরে এসে পৌঁছেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ, যুগ্ম মহাসচিব হারুন উর রশিদ, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব (দুলু), সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষক দলের মহাসচিব শহিদুল ইসলাম (বাবুল), ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনোকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ জুয়েল প্রমুখ।