ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল এক অনন্য ঐতিহ্যের নাম। ১৮৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুল ১৯০ বছর ধরে ঐতিহ্য ধরে রেখে স্বগর্বে এগিয়ে চলেছে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের উদ্যোগে স্কুল প্রাঙ্গণে ১৯০তম বর্ষপূর্তি উৎসব উদযাপনের আয়োজন করা হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই দিনব্যাপী আয়োজনে বিভিন্ন ব্যাচের সাবেক ও বর্তমান ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছিলো যেন এক মনোমুগ্ধকর মিলনমেলা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র এবং বর্তমান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে ইতোমধ্যে একটি মডেল পাঠানো হয়েছে।
উপদেষ্টামণ্ডলীর সময় ঘনিয়ে এসেছে, তবুও নতুন ভবন নির্মাণ বাস্তবায়নের চেষ্টা থাকবে জানিয়ে কলেজিয়েট স্কুলের ঐতিহাসিক ভবন ভাঙায় দুঃখ প্রকাশ করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, স্কুলের বিল্ডিং ভেঙে না ফেলে হেরিটেজ আকারে রাখা যেত। কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই।
কলেজিয়েট স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা এবং মুহূর্ত নিয়েও এ সময় স্মৃতিচারণ করেন উপদেষ্টা।
এর আগে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
১৮৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে দিনব্যাপী আয়োজন ছিল আনন্দ ও আবেগে পরিপূর্ণ।
উৎসবটি আয়োজন করে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন। সকাল ৯টা থেকে প্রাক্তন ছাত্রদের আগমনের মাধ্যমে শুরু হয় দিনের কার্যক্রম। এরপর সকাল ১০টায় স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে বের হয় এক বর্ণাঢ্য র্যালি, যেখানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা উৎসবের লোগো সম্বলিত টি–শার্ট পরে ইতিহাসের গর্বিত প্রতিনিধিত্ব করেন।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি ও খ্যাতনামা পানি ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত।
আলোচনায় অংশ নেন উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার ফেরদৌস আহমেদ রিয়াদ, প্রধান শিক্ষক মো. হাবিব উল্লাহ খান ও অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. হারুন–অর–রশিদ। সবাই স্কুলের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস স্মরণ করে আবেগঘন বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয় স্কুলের প্রাচীন ইতিহাস ও তার অসাধারণ অবদান। ব্রিটিশ ভারতে প্রতিষ্ঠিত প্রথম ইংরেজি মাধ্যম স্কুল হিসেবে এর যাত্রা শুরু, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে টানা আট বার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের কৃতিত্ব এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সংবর্ধনার মতো অনন্য ঘটনা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে করেছে গর্বিত।
অনুষ্ঠানে ১৯০তম বর্ষের উৎসব উপলক্ষে একটি কেক কাটা হয় এবং স্কুলকেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রধান অতিথিকে সম্মানসূচক ক্রেস্ট দেওয়া হয় দুপুর ১২টায়।
দ্বিতীয় পর্বে দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের পর বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় প্রাক্তণ ছাত্রদের স্মৃতিচারণা পর্ব, যেখানে শিক্ষাজীবনের নানা স্মৃতি তুলে ধরেন একাধিক গুণী ব্যক্তিত্ব। বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এ উৎসব প্রমাণ করে সময় যতই এগিয়ে যাক, শিক্ষার আলো ছড়ানো এসব প্রতিষ্ঠান তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর মূল্যবোধের ভিত্তিতে আগামীর পথচলায় অনন্য ভূমিকা পালন করে যাবে।
উৎসব উদযাপন কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও এসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য প্রণয় মজুমদার বলেন, আমাদের এই আয়োজনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করার জন্য আমাদের সকল সতীর্থদেরকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এবং আমাদের সকল স্পন্সর বিশেষ করে ভিঞ্চি প্রোপার্টিস লিমিটেড, ফার্নিচার কনসেপ্ট লিমিটেড, এলিয়েন্ট লিমিটেড, প্যারাডাইস টেকনোলজিস লিমিটেড, মার্কমেটালসহ সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার প্রতি জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।