টাঙ্গাইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব ও টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনির নামে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছে এক কিশোরী। ধর্ষণের ফলে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবার (৫ এপ্রিল) রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়েছে। গোলাম কিবরিয়া টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাবিবুর রহমানকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ওই কিশোরীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান জানান, গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট লুৎফুন্নাহারকে প্রধান করে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে। এ বোর্ড ওই কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা করবে।
ওই কিশোরী নিজে বাদী হয়ে মামলাটি করেছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বড় মনির তাদের আত্মীয় এবং পূর্ব পরিচিত। হোয়াটস অ্যাপে তাদের কথা হতো। ওই কিশোরীর ভাইয়ের সঙ্গে জমি নিয়ে সমস্যা হয়। এ কথা বড় মনিরকে জানানোর পর তিনি সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। বড় মনির পরে গত ১৭ ডিসেম্বর ওই কিশোরীকে শহরের আদালত পাড়ায় নিজের বাড়ির পাশে একটি ১০তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্লাটে যেতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর মেয়েটিকে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন তিনি। তাতে রাজি না হওয়ায় মেয়েটির মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বড় মনির কক্ষে ঢুকে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন এবং সে ছবি তুলে রাখেন। ধর্ষণ শেষে কাউকে এ কথা জানাতে নিষেধ করেন এবং কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেন তিনি। তারপর ছবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে প্রায়ই মেয়েটিকে ধর্ষণ করতেন বড় মনির।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এ ধর্ষণের কারণে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এ কথা জানালে বড় মনির তাকে গর্ভপাত করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় গত ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে বড় মনির মেয়েটিকে আদালত পাড়ায় তার শ্বশুরবাড়িতে তুলে নিয়ে যান। সেখানে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। তাতে রাজি না হওয়ায় ওই বাসার একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় মেয়েটিকে। পরে তাকে সেখানে আবার ধর্ষণ করেন বড় মনির। ধর্ষণের পর বড় মনিরের স্ত্রী তাকে মারপিট করলে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে রাত ৩টার দিকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয় তাকে। তারপর থেকে মেয়েটিকে নানা হুমকি দেওয়া হতো। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় মামলা করতে দেরি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করেছে ভিকটিম।
মোবাইল ফোনে এ প্রসঙ্গে কথা হয় গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার নামে এ মামলা করা হয়েছে।