বিজ্ঞাপন
শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪
শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪

ছুটির দিনে ঢাকার আশপাশে ঘোরাঘুরি

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

মুহাম্মদ জভেদ হাকিম

ছুটির দিন মানেই ঘোরাঘুরি। কখনো দূরে কখনো কাছে। কখনোবা আবার দূরে বহুদূরে। তেমনি এক শুক্রবার শখের বাহন মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটে চলি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলাধীন ভাটিরচরে। হেমায়েতপুরের ধল্লা ব্রিজ পার হবার পরেই, চোখে ধরা পড়তে শুরু করে আবহমান গ্রামবাংলার নয়নাভিরাম রূপ।

যেতে যেতে ভাটির চর গ্রামে। ঢাকার খুব কাছে। কিন্তু এখনো গ্রামের সৌন্দর্য ধারণ করে আছে। মেঠোপথ, বিস্তৃত ফসলের মাঠ, নানান গাছের সমাহার, গোলাভরা ধান, গবাদি পশুসহ কি নেই গ্রামটিতে।

কৃষকের সুখদুঃখের হাসি আপনাকেও সরল করে তুলবে। গ্রামীণ জনপদে ঘোরাঘুরিতে ভিন্ন মাত্রার আনন্দ মিলে। আনন্দপুর বাজারে গাভীর দুধের মালাই চায়ের স্বাদ নিয়ে, চলে যাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। দৃষ্টি নন্দন পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে বটতলায় দুপুরের আহার ভাতভর্তা দিয়ে উদরপূর্তি করে, আবারো ছুটে চলি সিএন্ডবি সড়ক ধরে শ্যামপুর গোলাপ গ্রামে। হাজার হাজার গোলাপের মাঝে নিজেকে কিছুটা সময় বিলিয়ে, সবুজের বারোভাজা খেতে খেতে এবার যাই বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি।

বিরুলিয়া যাওয়ার সময় পথের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে একাকি গলা ছেড়ে গাইতে ইচ্ছে করবে, পাগলা হাওয়ার তরে। গাইতে গাইতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন জমিদার রজনীকান্ত ঘোষের বাড়িতে। বাহির থেকে প্রথম দেখায় নিরাশ হবেন না। কিংবা কারও বারণ শুনে চলেও আসবেন না। চলে যাবেন বাড়ির ভিতরে। এবার দাঁড়ান কিছুক্ষণ উঠোনে। দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার মাথায় কিছু একটা ভর করতেছে। কি ভয় পেলেন? আরে নাহ, তেমন কিছু না। জাস্ট অন্দরমহল দেখার নেশা জাগবে, এই যা। নেশার পারদ যখন চরমে তখন ভিতরে ঢোকা আর ঠেকায় কে।

স্থানীয় কিশোর মঞ্জুকে সঙ্গী করে প্রথমে অন্দরমহলে ঢুকি। এরপর একেবারে চিলে কোঠা পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে দেখি। জমিদার বাড়িতে মোট ১১টি স্থাপনা রয়েছে। লোক মুখে জানতে পারি, বর্তমানে দুটো হিন্দু পরিবারের বসবাস রয়েছে। তারা নাকি জমিদারের বংশধর। কিন্তু আমার তা মনে হয়নি। আমরা যে স্থাপনাটিতে ঢুকেছি তা পুরোই ফাঁকা। ঘরের মেঝ, সিলিং, দরজা, জানালায় এখনো তৎকালীন আভিজাত্যের দৃশ্যমান। নেই শুধু পাইকপেয়াদাদের হাঁকডাক। কিংবা বাঈজীর নুপূরের আওয়াজ। দেখতে দেখতে দ্বিতলা পেরিয়ে ছাদ। এরপর চিলেকোঠায়। বাহ্ আজ আর নেই কোন জমিদারের নিরাপত্তা রক্ষীদের হুঙ্কার। নেইকো কোন বাঁধা। ইচ্ছেমত ছাদ থেকে পুরো বাড়ি ও তার আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখি। বাড়িটি এক সময়কার প্রমত্তা তুরাগ নদের তীরে। বর্ষাশরতে যার যৌবন অনেকটাই ফিরে আসে।আসে না শুধু জমিদার রজনী কান্তের শৌর্যবির্য। এই বাড়ির পূর্ব মালিক ছিল জমিদার নলিনী মোহন সাহা। তার কাছ থেকে ৮ হাজার ৯৬০ টাকা ৪ আনা দিয়ে জমিদার রজণীকান্ত ক্রয় করেছিলেন। বাড়িটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটা মন্দির, সদর ঘর, বিচার ঘর, সাজঘর, বিশ্রামাগার, পেয়াদা ঘর, ঘোড়াশালসহ আরো কিছু ঘর। ১৯৬৪ সালের দাঙ্গার সময় রজনী কান্ত ঘোষের স্মৃতিসহ মূল্যবান অনেক কিছুই লুট হয়ে যায়। শুধু লুট হতে পারেনি জমিদার রজনীকান্তের নাম। ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোতে ঘুরতে গেলে, মনের ভেতর একপ্রকার নস্টালজিয়া কাজ করে।

পুরো বাড়িটি ঘুরে এবার গিয়ে উঠলাম কোষা নৌকায়। চারপাশের অনেক গ্রাম বর্ষায় মূল ভূখণ্ড হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কোষা নৌকায় ভাসতে ভাসতে এক বট বৃক্ষের ছায়ায় নৌকা ভিড়াই। সেখান থেকে বিরুলিয়ার নয়না ভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা লিখে বুঝানো সম্ভব না। শুধু এতটুকুই লিখব, ঢাকার আশপাশ থেকেও যারা এখনও সিঙ্গাইরের সবজি বাগান আর বিরুলিয়া দেখেন নাই, তারা যেন সুখময় জীবনান্দ সূত্রটার খোঁজ এখনো পাননি।

চলেন যাইঃ মোটরসাইকেল/সাইকেলে বেস্ট। আর যাদের দুইটার কোনোটাই নাই তারা যেতে পারেন গুলিস্তান/গাবতলীসহ ঢাকার অনেক বাসস্ট্যান্ড থেকে সাভারের হেমায়েতপুর/রাজফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে রিকশা/অটোরিকশা করে সিঙাইর উপজেলার ভাটিরচর গ্রাম। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, গোলাপ বাগান ও বিরুলিয়া জমিদারবাড়ি দেখার জন্য লেগুনা/অটোরিকশায় চড়ে যাওয়া যাবে।

ভ্রমণ তথ্যঃ সিঙ্গাইরে ভাটিরচর গ্রাম, মানিকগঞ্জ জেলা হলেও সাভারের পাশে। খুব সকালে যেতে পারলে একদিনেই সব ঘুরে আসা যাবে।

ছবির ছৈয়ালঃ দেছুট ভ্রমণ সংঘ

আল/ দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More