গাইবান্ধা পৌরসভার ২০২৩–২০২৪ অর্থ বছরের প্রাক বাজেট ও শহর সমন্বয় কমিটির (টিএলসিসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৩১ মে) পৌরসভার সভাকক্ষে এ প্রাক বাজেট সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় ১৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত রেখে ৭৩ কোটি ২৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার প্রাক বাজেট উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রাজস্ব খাতে ১৮ কোটি ৭৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন খাতে ৫৪ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা আয় ধরে প্রাক বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পৌর মেয়র মতলুবর রহমান। পৌর মেয়রের শুভেচ্ছা বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এসময় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বিপুল কুমার সাহা ২০২৩–২০২৪ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত খসড়া বাজেট উপস্থাপন করেন।
এরপর গাইবান্ধা পৌরসভার সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম এর সঞ্চালনায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে টিএলসিসি’র সদস্যগণ বাজেটের উপর মূল্যবান পরামর্শ ও মতামত প্রদান করেন। এ সময় সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাহামুদুল হক শাহাজাদা বলেন, ‘গাইবান্ধার তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে পৌর এলাকায় নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ও তোরণ নির্মাণ করা প্রয়োজন। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা অপ্রতুল।’ তিনি মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ও তোরণ নির্মাণ খাতে আরো বেশি বরাদ্দের দাবি জানান। জেলা আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা সাইফুল ইসলাম সাকা বলেন, ‘পৌরসভাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ময়লা আবর্জনা অপসারণে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা আরো বৃদ্ধি করা উচিত। কারণ অন্যান্য শহরের তুলনায় গাইবান্ধা শহর অপরিচ্ছন্ন। তাই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি পৌর নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে।’
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের গাইবান্ধা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম বাবু বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ‘বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে পাঠাগার নির্মাণ ও বইপুস্তক ক্রয়, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি, পৌর মুক্ত মঞ্চ নির্মাণের কথা বলা আছে। এগুলো দৃশ্যমান হলে তরুণ প্রজন্ম সংস্কৃতিমনা হয়ে গড়ে উঠবে।” ওয়ার্ড কাউন্সিলর রকিবুল হাসান সুমন পৌর এলাকার বেকার সমস্যা দুর করতে তরণ–তরুণীদের আউটসোর্সিং প্রশিক্ষনে অর্থ বরাদ্দ রাখার দাবি জানান। তিনি বলেন, “ বিভিন্ন পৌরসভায় বেকার তরুণ–তরুণীরা মাঝে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক অর্থ উপার্জন করে স্বাবলম্বী হয়েছে। বেকারত্ব দূর করতে আমরা বাজেটে আউটসোর্সিংয়ে বাবদ বরাদ্দ রাখতে পারি।”
বাজেটে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে পৌর মেয়র বলেন, “গাইবান্ধা পৌরসভা একশ বছর পার করলেও সময়ের সাথে সাথে পৌরসভার কাঙ্খিত উন্নয়ন সাধিত হয়নি। বর্তমান পৌর পরিষদ নির্বাচিত হয়ে নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু সময়োপযোগী আয় বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে রি–এ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। পৌর নাগরিকদের স্বাস্ব্য সেবায় আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার ডেলিভারী সার্ভিসেস প্রজেক্ট–২ এর আওতায় শহরের তিনটি স্থানে নগর মাতৃসদনের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
পৌরসভার শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে তিনি বলেন, “আমরা গাইবান্ধা পৌরসভার শতবর্ষ পার করছি। এ উপলক্ষ্যে আমরা জমকালো একটি অনুষ্ঠান করবো। আমি ব্যক্তিগতভাবে স্থানীয় সরকারন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় এর সাথে দেখা করেছি। মন্ত্রী মহোদয়গণ পৌরসভার শতবর্ষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।” এসময় তিনি, ডিবি রোডে ডিভাইডারে লাইটিং, পুরাতন বাজার গোল চত্বরে মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্য, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট এর মাধ্যমে তেল–গ্যাস উৎপাদন হবে বলে উল্লেখ করেন।
উন্মুক্ত আলোচনায় আরো বক্তব্য রাখেন, কাউন্সিলর কামাল হোসেন, শেখ সর্দার আসাদুজ্জামান হাসু, কাজী হুমায়ুন কবীর স্বপন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী মাহমুদা বেগম পারুল, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হানিফ সরদার, নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল হক, ব্র্যাক ইউডিপি’র আঞ্চলিক সমন্বয়ক অপূর্ব সাহা, এনজিও প্রতিনিধি আশরাফুল আলম, মাহমুদুল হাসান, দরিদ্র জনগোষ্ঠির প্রতিনিধি সাদা রানী প্রমুখ।
আল/দীপ্ত সংবাদ