খুলনার কয়রায় আসছেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) শুভেচ্ছাদূত হিসেবে সুইডেনের রাজকন্যা প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া। রাজকন্যার আগমন ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে খুলনা ও কয়রা উপজেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল ৮টায় হেলিকপ্টারে করে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের গিলাবাড়ি এলাকার নয়নী মাঠে নির্মিত হেলিপ্যাডে অবতরণ করবেন। এরপর পর্যায়ক্রমে ছয়টি স্থান পরিদর্শন শেষে বেলা ১২টায় কপোতাক্ষ কলেজ মাঠে আসবেন। এরপর কয়রা ত্যাগ করবেন তিনি। সংক্ষিপ্ত সময়ে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিতে থাকা দুটি এলাকা পরিদর্শন করবেন ও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের অনুভূতি শুনবেন ও জীবন জীবিকা কার্যক্রম দেখবেন।
সুইডেনের রাজকন্যার আগমন ঘিরে পুরো এলাকাজুড়ে নিরাপত্তার পাশাপাশি রাস্তাঘাট পরিষ্কার–পরিছন্ন করা হয়েছে। বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো পুরো কয়রা উপজেলা।
৫০০ স্থানে ১৬০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দুটি হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়েছে। রাজকন্যার পরিদর্শনের জন্য নির্দিষ্ট ছয়টি স্থানে আইনশৃঙ্খলার সব ধরনের বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রীয় অতিথি কয়রায় আগমনে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ৫০০ স্থানে ১৬০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ড, গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে।
রাজকন্যাকে নিজেদের চাওয়া পাওয়ার কথা গুলো জানাবেন এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের নয়ানি গ্রামের সুফিয়া খাতুনসহ (৪০) ওই গ্রামের কয়েকজন নারী।
সুইডিশ রাজকন্যা ভিক্টোরিয়া খাবার পানির উৎস রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংয়ের উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলবেন। এজন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছেন সুফিয়াসহ ওই এলাকার একাধিক নারী। প্রায় ৪১ হাজার জনসংখ্যার এ ইউনিয়নের ১২ গ্রামের মানুষের সুপেয় পানির সংকট দীর্ঘদিনের। বছরের তিন মাস বৃষ্টির পানিতে চললেও বাকি ৯ মাস অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। খাবার পানি নিরসনে ইউনিয়নের ভাগবা, মহেশ্বরীপুর, সাতহালিয়া ও নয়ানি গ্রামে চারটি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টার স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ১ হাজার ৬০০ উপকারভোগী কার্ড সিস্টেমের মাধ্যমে ৬ মাস খাবার পানি সংগ্রহ করতে পারেন। বাকি ছয় মাস এসব উপকারভোগীকেও ড্রাম প্রতি ৬০ টাকা দিয়ে খাবার পানি কিনতে হয়। তবে ঘর–গৃহস্থালিসহ অন্যান্য কাজ নদীর নোনা পানি দিয়েই সারতে হয়।
১৮ থেকে ২১ মার্চ ইউএনডিপির শুভেচ্ছাদূত হিসেবে বাংলাদেশ সফর করবেন সুইডিশ রাজকন্যা ভিক্টোরিয়া। তার সফরের অংশ হিসেবে ১৯ মার্চ কয়রা সফর করবেন তিনি। উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের নয়ানি যজ্ঞ মন্দিরের মাঠে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংয়ের উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলবেন সুইডেনের রাজকন্যা।
মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়ার আমাদের পরিষদে আসবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। সেজন্য পরিষদ চত্বর পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি সাজানো হচ্ছে।
খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াছির আরেফীন বলেন, জাতিসংঘ শুভেচ্ছা দূত হিসেবে মঙ্গলবার খুলনার কয়রা উপজেলা পরিদর্শনে করবেন। উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় লোকজনের জীবনমান দেখা, লিঙ্গ সমতা, মহারাজপুর ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটালাইজেশনে রূপান্তর দেখা, মদিনাবাদ স্মার্ট পোস্ট সেন্টারের উদ্বোধন এবং চলমান কয়রার দুর্যোগ কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করবেন।