সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে শারদীয় দুর্গোৎসব প্রধান ধর্মীয় উৎসব। স্বভাবতই দুর্গাদেবীকে আমরা বাঙালির সাজে আবির্ভূত হতে দেখি। তিন পার্বত্য জেলায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজনও সনাতন ধর্ম পালন করে থাকেন। তারা দুর্গা দেবীকে তাদের আদলে ত্রিপুরা রমনীর সাজে, পোষাকে–অলংঙ্কার দিয়ে সজ্জিত করেছেন। তাছাড়া দুর্গা দেবী আরোহনের মঞ্চও ত্রিপুরা সংস্কৃতি তুলে ধরে সাজানো হয়েছে। ত্রিপুরা রমনীর সাজে দুর্গা দেবীকে দেখে ভক্তরা খুবই খুশী ও উৎফুল্ল।
সারাদেশের ন্যায় খাগড়াছড়িতেও উদযাপন হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। এরমধ্যে কিছু মন্ডপে সার্বিক ব্যবস্থাপনা করছেন ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকেরা। এই মন্ডপগুলোতে দুর্গা দেবীকে ত্রিপুরা সংস্কৃতির আদলে সাজানো হয়েছে। দুর্গা দেবীকে ত্রিপুরা রমনীর পরিধেয় বস্ত্র রিনা–রিসা ও অলঙ্কার পড়ানো হয়েছে। এছাড়া দেবী দুর্গার মঞ্চটিও তৈরি করা হয়েছে ত্রিপুরা সংস্কৃতি আদলে ।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের খাগড়াপুর এলাকায় পূজা মন্ডপ ও পানছড়ি উপজেলার কুড়াদিয়া ছড়া পূজা মন্ডপে এ বছরও দুর্গা দেবীকে সাজানো হয়েছে ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে । দেবী দুর্গাকে ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে দেখে খুশি ও আনন্দে উৎফুল্ল ভক্তবৃন্দরা।
দুর্গোৎসবে ভক্তদের সুবিধার্থে পূজা উদযাপন কমিটি এবার প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের স্থান, বসার স্থান, কৃর্তন গান পরিবেশন ও ঢাক–ঢোল বাজানের স্থান আলাদাভাবে সুন্দরভাবে সাজিয়ে দিয়েছেন। ভক্তরা যাতে আরামে আনন্দে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারেন তারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। পূজা উদযাপন কমিটি আশা করছে এবারে ভক্তদের সমাগম বেশী হবে। পূজা উদযাপনে কোন ধরনের বাধার সন্মুখীন হতে হয়নি তাদের।
খাগড়াপুর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক চামেলী ত্রিপুরা জানান দেবী দুর্গাকে ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী অংলাকার ও রিা রিসাই পরিধান করে সাজিয়ে ত্রিপুরা রমনী রূপে আবিস্কার করেছেন। যেহেতু তাদের সংস্কৃতি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে, সেহেতু বাশের কারুকার্য করে এটা প্রতিফলন করা চেষ্টা করেছেন। ত্রিপুরা সম্প্রদায় যেভাবে বসবাস করেন সেভাবে দেবী দুর্গাকে আবিস্কারের চেষ্টা করেছেন।
পূজা উদযাপন কমিটির সহ–সভাপতি মিহির কান্তি ত্রিপুরা জানান, বিগত বছরের ন্যায় এবার ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী অলংকা ও রিনা রিসাই পড়িয়ে এবারও উদযাপন করছেন।
প্রধান পুরোহিত প্রভাংশু ত্রিপুরা বলেন, তারা শিব এবং দুর্গার উপাসক তাই ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি অনুসারে দেব–দেবী সেভাবে সাজান। খাগড়াপুর যেহেতু ত্রিপুরাদের এলাকা, তাই এটা স্বাভাবিক যে ত্রিপুরা লোকালয়ে দেব–দেবী উপর ত্রিপুরাদের চাপ আসবে এটা স্বাভাবিক। এখানে দেবী ত্রিপুরা রমনী ন্যায়,ত্রিপুরা আদলে নির্মিত হয়েছে। মঞ্চটিও বাঁশ ও বেত দিয়ে বানানো হয়েছে।
সনাতন ধর্ম অনুসারীরা দুর্গাদেবীকে নিজেদের আদলে, সংস্কৃতিতে উপস্থাপন করে, দেখতে চায়। যেহেতু সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব, তাই দুর্গাদেবীকে আমরা বাঙালি সংস্কৃতির আদলে দেখতে পাই। বাঙালি সংস্কৃতির বাইরে অন্য সংস্কৃতির অনুসারীরা দুর্গাদেবীকে দেখা এদেশে খুব কমই দেখা মেলে। সেই দিক থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের খাগড়াপুর এলাকার ও পানছড়ি উপজেলার কুড়াদিয়া ছড়া পূজা মন্ডপটি একটি অনন্য। অন্যান্য বছরের মতো এবছরও সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপন শেষ হবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
প্রদীপ চৌধুরী/মোরশেদ আল/দীপ্ত নিউজ