দীপ্ত নিউজ ডেস্ক
ইতিহাসে এমন অনেক শাসক রয়েছেন, যারা ক্ষমতা হারানোর পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এদের বেশিরভাগই গণ–অভ্যুত্থান, সামরিক অভ্যুত্থান বা বিদেশি হস্তক্ষেপের কারণে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল আসাদ এবার সে তালিকায় যুক্ত হয়েছেন।
দীর্ঘ ২৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএস) চূড়ান্ত হামলার পর আল আসাদ তার দেশ থেকে পালিয়ে যান।
বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানরা একাধিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, জনগণের বিদ্রোহ কিংবা বিদেশি চাপের কারণে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়েছেন। এমন কিছু উদাহরণ রয়েছে–
১. বাতিস্তা (কিউবা)
সময়: ১৯৫৯
ফিদেল কাস্ত্রোর বিপ্লবের সময় প্রেসিডেন্ট ফালজেনসিও বাতিস্তা দেশ থেকে পালিয়ে যান এবং ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে আশ্রয় নেন।
২. মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি (ইরান)
সময়: ১৯৭৯
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সময় শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি ক্ষমতা হারান এবং দেশ থেকে পালিয়ে যান। পরে তিনি মিশরে আশ্রয় নেন। তার শাসনকালকে স্বৈরাচারী ও পশ্চিমাপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
৩. সাবেক রাষ্ট্রপতি ফার্দিনান্দ মার্কোস (ফিলিপাইন)
সময়: ১৯৮৬
এক গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। এর আগে নির্বাচনে মি. মার্কোসকে বিজয়ী ঘোষণা করায় নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে এবং উত্তাল হয়ে ওঠে জনরোষ।
জনরোষ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়, তার ফলে বিশ বছরের ন্বৈরশাসনের শাসনের অবসান ঘটে এবং জনরোষের মুখে দেশ ছেড়ে সপরিবারে আমেরিকার হাওয়াইতে পালিয়ে যান ফার্দিনান্দ মার্কোস সিনিয়র।
৪. সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদিক আল মাহদি (সুদান)
সময়: ১৯৮৯
দেশটিতে রাজনৈতিক সংকটের কারণে তিনি পালিয়ে যান।
৫. সাবেক রাষ্ট্রপতি আলবের্তো ফুজিমোরি (পেরু)
সময়: ২০০০
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দুই–তৃতীয়াংশেরও বেশি ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। কিন্তু এই দ্বিতীয় পর্বের শাসনে তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তীব্রতর হতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত ২০০০ সালের নভেম্বর মাসে তিনি জাপানে পলায়ন করেন এবং সেখান থেকেই রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তী পেরু সরকার তার বিরুদ্ধে অনেকগুলি মামলা দায়ের করে এবং তাকে পেরুতে ফিরিয়ে এনে বিচারের চেষ্টা করতে থাকে। ২০০৫ সালে চিলিতে আসলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরে ২০০৭ সালে তাকে পেরুর প্রশাসনের কাছে হতান্তর করে দেয়া হয়। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে একটি মামলার রায়ে আদালত তাকে ৬ বছরের কারাদণ্ড দেন।
৬. প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি ( আফগানিস্তান)
সময়: ২০২১
২০১৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আশরাফ ঘানি। ২০২১ সালের আগস্টে তালেবানরা কাবুল দখল করলে, তিনি দেশ ছেড়ে চলে যান। ঘানি জানিয়েছেন, তাকে মাত্র ২ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল দেশ ছাড়ার জন্য, ফলে তাজিকিস্তান হয়ে তিনি আবুধাবী চলে যান।
৭. প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে( শ্রীলঙ্কা)
সময়: ২০২২
২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু দেশটির অর্থনৈতিক সংকট ও জনগণের ব্যাপক আন্দোলনের কারণে ২০২২ সালের জুলাইয়ে তাকে মালদ্বীপ হয়ে সিঙ্গাপুরে পালাতে হয়। শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে পড়ার পর রাজাপাকসে পদত্যাগ করেন। তবে পরে তিনি ফের দেশে ফিরে আসেন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন।
৮. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ( বাংলাদেশ)
সময়: ৫ আগস্ট ২০২৪
অবশেষে, ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে পালাতে বাধ্য হন এবং ভারতে আশ্রয় নেন। এখন তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন।
৯. বাশার আল আসাদ ( সিরিয়া)
সময়: ২০২৪
সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএস) চূড়ান্ত হামলার পর আল আসাদ তার দেশ থেকে পালিয়ে যান। আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়াকে মুক্ত ঘোষণা করেছে বিদ্রোহীরা এবং আসাদ বিমানে দামেস্ক ছেড়ে অজানা গন্তব্যে চলে যান।
আল
