আজ ১৭ আগস্ট, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৬ সালের এই দিনে তিনি পরলোকগমন করেন, কিন্তু তার সাহিত্যকর্ম ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার আলো আজও উজ্জ্বল। শামসুর রাহমানের কবিতা একদিকে যেমন বাঙালি জাতির মুক্তির আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি, অন্যদিকে তা মানবিক মূল্যবোধের অকৃত্রিম মূর্ত প্রতীক।
তিনি শুধু একাধারে নগর জীবনের চিত্রকর নন, তিনি ছিলেন মানুষের সংগ্রাম, প্রতিবাদ, এবং স্বাধীনতা প্রাপ্তির স্বপ্নের অনন্য কণ্ঠস্বর। তাঁর লেখা ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ কবিতাগুলোতে স্বাধীনতার জন্য যে ত্যাগ ও আত্মত্যাগের কথা উঠে আসে, তা আজও পাঠকদের হৃদয়ে গেঁথে আছে। এই দুটি কবিতা শুধু সাহিত্যের দৃষ্টিতে মূল্যবান নয়, বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অপরিহার্য দলিল।
শামসুর রাহমানের জন্ম ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার মাহুতটুলীতে। তাঁর পৈতৃক বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়। শৈশব থেকেই সাহিত্যচর্চায় মগ্ন এই কবি পরে সাংবাদিকতার পেশায় যুক্ত হন। ১৯৫৭ সালে দৈনিক মর্নিং নিউজে সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং একসময়ে দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে, যা সমসাময়িক বাংলা কবিতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করে। তাঁর পরবর্তী রচনাগুলোতেও উঠে এসেছে জীবনের নানামুখী অভিজ্ঞতা ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিচ্ছবি। ষাটের দশকে প্রকাশিত তার অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘রুদ্র করোটিতে’, ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’, ‘নিরালোকে বসতি’, এবং ‘নিজ বাসভূমে’। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি রচনা করেন ‘বন্দি শিবির থেকে’, ‘মাতাল ঋতিক’সহ আরও অনেক উল্লেখযোগ্য কবিতা, যা বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে।
শামসুর রাহমানের সাহিত্যকর্মের বিস্তৃতি শুধু কবিতায় সীমাবদ্ধ ছিল না। তার সৃষ্টিশীলতা ছড়িয়েছে শিশুতোষ সাহিত্য, গল্প, উপন্যাস, নাটক, এবং অনুবাদ সাহিত্যের দিকে। তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় ৬০টি কবিতার বই, শতাধিক প্রবন্ধ, নাটক, ও অনুবাদগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, যা বাংলা সাহিত্যে এক অমূল্য সংযোজন।
শামসুর রাহমানকে শুধুমাত্র কবি হিসেবে নয়, একজন সমাজসচেতন, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক হিসেবে স্মরণ করা হয়। তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে তিনি আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে গেছেন অসামান্য এক দিশারি আলোকবর্তিকা, যা তাঁদের পথচলায় প্রেরণা জোগাবে।
এমএম/এসএ/দীপ্ত সংবাদ