জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য হাসিবুর রশীদসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে সোমবার (১৩ অক্টোবর) দশম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে।
এর আগে গত ৬ অক্টোবর নবম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। ওই দিন জবানবন্দি দেন পুলিশের দুই উপপরিদর্শক—এসআই রফিক ও এসআই রায়হানুল রাজ দুলাল। দুজনই জব্দতালিকার সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। পরে তাদের জেরা করেন পলাতক ২৪ আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত চার আইনজীবীসহ গ্রেপ্তার আসামিদের আইনজীবীরা।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মঈনুল করিম ও আবদুস সোবহান তরফদার। তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ।
এর আগে, ২৯ সেপ্টেম্বর অষ্টম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওই দিন তিনজন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। ২২ সেপ্টেম্বর সপ্তম দিনে, ছয় নম্বর সাক্ষী সিয়াম আহসান আয়ানকে জেরা করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আয়ান ২১ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তিনিই প্রথমে আবু সাঈদকে হাসপাতালে নেওয়ার উদ্যোগ নেন এবং নিজের সাক্ষ্যে সেই ঘটনার পূর্ণ বিবরণ তুলে ধরেন।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর পঞ্চম দিনের জেরা শেষ হয়। ওই দিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার লাইব্রেরিয়ান আনিসুর রহমানকে জেরা করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর চতুর্থ দিনে তিনি পাঁচ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। একই দিন এসআই মো. তরিকুল ইসলামও জবানবন্দি দেন।
৮ সেপ্টেম্বর রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজিবুল ইসলামের জেরা শেষ করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। তিনি ৭ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দেন। ওই দিন রংপুরে কর্মরত এনটিভির সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট একেএম মঈনুল হককেও জেরা করা হয়।
গত ২৮ আগস্ট জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের জবানবন্দির মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। একই দিন সাংবাদিক মঈনুল হকও সাক্ষ্য দেন।
এ মামলার গ্রেপ্তার ছয় আসামি হলেন—এএসআই আমির হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ।
গত ২৭ আগস্ট সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর আগে ৬ আগস্ট ৩০ আসামির বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
তবে এ মামলায় বেরোবির সাবেক উপাচার্যসহ ২৪ জন আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন। তাদের পক্ষে গত ২২ জুলাই সরকারি খরচে চারজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
গত ৩০ জুলাই পলাতক আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত চার আইনজীবী। এর মধ্যে পাঁচজনের পক্ষে লড়েন আইনজীবী সুজাত মিয়া। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মামুনুর রশীদ। এছাড়া আইনজীবী ইশরাত জাহান ও শহিদুল ইসলামও শুনানিতে অংশ নেন।
২৯ জুলাই তিন আসামির পক্ষে শুনানি হয়। এর মধ্যে শরিফুলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমিনুল গণি টিটো, কনস্টেবল সুজনের পক্ষে আজিজুর রহমান দুলু এবং ইমরানের পক্ষে সালাহউদ্দিন রিগ্যান।
২৮ জুলাই ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন। ৩০ জুন ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয়। এর আগে ২৪ জুন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এই মামলায় মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৬২ জন।