মানিকগঞ্জে আড়তের পাইকারি বাজার থেকে কেনা সবজি খুচরা বাজারে ভোক্তার কাছে দিগুন দামে বিক্রি করা হচ্ছে। জেলা সদরের বৃহত্তম দুইটি আড়ত ও দুইটি খুচরা বাজারে ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারী ও খুচরা বাজারগুলোতে শীতের সবজিতে ভরপুর। বিভিন্ন প্রকার শীতকালীন সবজিতে বাজারগুলো যেন সেজেছে এক রঙিন সাজে। বিভিন্ন এলাকায় সবজির ফলন ভালো হওয়ায় বাজারে শীতকালীন সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। তবে, খুচরা বাজারে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। সবরকম সবজি বাজারে পাওয়া গেলেও খুচরা ও পাইকারী বাজারের দামের তারতম্য বেশ ভালোই। প্রতিটি সবজি ক্রয়মূল্যের চেয়ে প্রায় ৫০ থেকে ১০০ গুন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তারা বলছেন, বাজার তদারকি আরো বাড়ালে দামের ব্যবধান অনেকটাই কমে আসবে।
সরেজমিনে, বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) জেলা সদরের ভাটবাউর ও জাগীর বন্দর আড়তে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি নতুন আলু ৪০ টাকা, ফুলকপি ৩২ থেকে ৩৫ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, গাজর ৪৪ টাকা, কাঁচামরিচ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, বেগুন (লম্বা) ২০ থেকে ২২ টাকা, সিম ৩৫ টাকা, নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৮০ টাকা, পাতাসহ পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, পুরাতন দেশী পেঁয়াজ ১৫০ টাকা ও মূলা ৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুইটি আড়তে প্রতিটি সবজির দামের পার্থক্য ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে ভাটবাউর আড়ত প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শহরের পৌরসভা কাঁচাবাজারে। সেখানে প্রতিটি সবজি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ক্রয়মূল্যের চেয়ে ৫০ থেকে ১০০ ভাগ বেশি দামে।
পৌরসভা কাঁচাবাজারে প্রতিকেজি নতুন আলু ৬০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, টমেটো ৭৫ টাকা, গাজর ৬৫ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, বেগুন (লম্বা) ৪০ টাকা, সিম ৬০ টাকা, নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১১০ টাকা, পাতাসহ পেঁয়াজ ৭০ টাকা, পুরাতন দেশী পেঁয়াজ ১৭০ টাকা ও মূলা ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের শহর কাঁচাবাজারের চিত্রও এমনই।
পৌরসভা কাঁচাবাজারের কয়েকজন খুচরা বিক্রেতার সাথে কথা হলে তারা জানান, ‘এখন এলাকায় সবজি উৎপাদন ও সরবরাহ বেশি। যে কারণে প্রতিদিন সবজির দাম কিছুটা কমে। আমরা প্রায় প্রতিদিন ভোরে আড়ত থেকে চাহিদামত সবজি কিনে এনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেগুলো বিক্রি করি। তাদের কাছে পাইকারী বাজারের সাথে খুচরা বাজারের দামের পার্থক্য সম্পর্কে জানতে চাইলে বলে, ‘আমরা কমে কিনলে কমে বিক্রি করতে পারি। এখন সবজির মূল্য সকলেরই নাগালের মধ্যে রয়েছে।’
বাজারে কিনতে আসা সজল রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘এখন সবজির ভরা মৌসুম অধিকাংশ সবজির দাম ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন টিভি সংবাদে দেখি পাইকারি বাজারে সবজির দাম অনেক কমে বিক্রি হচ্ছে কিন্তু খুচরা বাজারে চরা দামেই কিনতে হচ্ছে আমাদের।’
বেসরকারি চাকরিজীবি মাহবুব খানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘সকালে এককেজি করে নতুন আলু, নতুন পেঁয়াজ, টমেটো ও ফুলকপি কিনেছি। তাতে আমার ৩১০ টাকা লেগেছে। এই মৌসুমে তো অনেক সবজির আবাদ হয় তাহলে দামটা তুলনামূলকভাবে কমেনি। পাইকারি বাজারে সর্বোচ্চ এর দাম ২০০ বা ২২০ টাকা হবে। বাজারে শক্ত মনিটরিং দরকার। তাহলেও সব জিনিসের দাম আরো কমে আসবে। আমরা স্বস্তিতে বাঁচতে পারবো।’
জেলা ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক শামসুন্নবী তুলিপ জানান, ‘যখন পাইকারী ও খুচরা বাজারে সবজির দামের পার্থক্যটা অনেক বেশি হয়ে যায় তখনই ক্রেতাদের বেশি টাকায় সেসব কিনতে হয়। মানিকগঞ্জের খুচরা ও পাইকারী বাজারের দামের পার্থক্যটা বেশ ভালোই। এর সাথে প্রতিটি দপ্তরকে আরো বেশি যার যার অবস্থান থেকে শক্ত হতে হবে। বাজার তদারকি আরো বাড়াতে হবে। খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে বসে তাদের লাভের পরিমানটা যদি সংশ্লিষ্ট দপ্তর নির্ধারণ করে দেয় তাহলে এই অবস্থা থেকে বের হওয়া যাবে।’
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল জানান, ‘পেঁয়াজসহ সকল সবজি যেন ভোক্তারা কমে কিনতে পারেন তার জন্য মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলায় প্রতিনিয়ত অভিযান চলমান আছে। বিক্রেতারা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করলেই তাদেরকে অভিযানের মাধ্যমে অর্থদণ্ড দেওয়া হচ্ছে।’
চন্দন/মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ