বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর প্রভাবে বুধ ও বৃহস্পতিবার সারা দেশের ন্যায় মাগুরাতেও বৃষ্টিপাত হয়েছে। বুধবার বৃষ্টি কম থাকলেও বৃহস্পতিবার সারাদিনের অব্যাহত বৃষ্টিতে জেলার বেশ কিছু নিচু ফসলি জমিতে পানি জমেছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এ বছর ৫০ হাজার ৪৬৪ হেক্টর জমিতে রবিশস্যের চাষ হচ্ছে। যার মধ্যে বৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমি। আক্রান্তের মধ্যে বেশি রয়েছে সরিষা। যার ফলে রবি শস্যের কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা করছে জেলা কৃষি বিভাগ।
এদিকে জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় চলতি মৌসুমে সরিষার আবাদ হচ্ছে ২২ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৯৭০ হেক্টর। বৌর বীজতলা ৭৭৫ হেক্টর যার মধ্যে আক্রান্ত ৬৫ হেক্টর। গম ৫ হাজার ২৫০ হেক্টর যার মধ্যে আক্রান্ত ৩৭০ হেক্টর। ভুট্টা ১১৫ হেক্টর যার মধ্যে আক্রান্ত ৫৫ হেক্টর। শীতকালীন সবজির আবাদ হচ্ছে ৩ হাজার ৬০৩ হেক্টর যার মধ্যে আক্রান্ত ৩০০ হেক্টর। মরিচ আবাদ হচ্ছে ১৯৭ হেক্টর যার মধ্যে আক্রান্ত ৫ হেক্টর। পেঁয়াজ ৮১৯ হেক্টর যার মধ্যে আক্রান্ত ৩০ হেক্টর। রসুন ৮৮০ হেক্টর যার মধ্যে আক্রান্ত ২০ হেক্টর। ধুনিয়া ৩৯৮ হেক্টর যার মধ্যে আক্রান্ত ৪০ হেক্টর। মসুর ১৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর যার মধ্যে আক্রান্ত ৮৮৫ হেক্টর। মটর ডাল ৬৫৫ হেক্টর যার মধ্যে আক্রান্ত ২০ হেক্টর। কালোজিরা ৯১ হেক্টর যার মধ্যে আক্রান্ত ২০ হেক্টর ও খেসারী ৭২৭ হেক্টর যার মধ্যে আক্রান্ত ৫০ হেক্টর।
তবে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে পুনরায় বৃষ্টিপাত না হলে আক্রান্ত ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না।
সরেজমিনে গিয়ে মাগুরা সদরের আঠারকাদা ইউনিয়নের অক্কুরপাড়া ফসলি মাঠে গিয়ে কথা হয় কৃষক বিধান সেন এর সাথে। গমের খেতে পানি আটকে যায়। তখন পানি অপসারণের চেষ্টা করছিলেন তিনি।
ঐ কৃষক বলেন, এই মৌসুমে প্রায় ৮ বিঘা জমিতে গমের চাষ করছি। যার মধ্যে সাড়ে চার বিঘা জমির গম ইতিমধ্যে গাছ জ্বালিয়েছে। যেগুলো ক্ষতির সম্ভাবনা নাই। তবে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে সম্প্রতি গম বোনায় সেখানে পানি জমায় কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা করছি। তবে পুনরায় বৃষ্টিপাত না হলে সেখানে ক্ষতির সম্ভাবনা তেমন নেই।
একই মাঠে কথা হয় অপর কৃষক অচিন্ত্য সেন বলেন, ১০০ শতক জমিতে গমের চাষ করছি। যেখানে এই বৃষ্টিতে কিছুটা পানি জমেছে। যদি পুনরায় বৃষ্টি না হয় আমার গমের ক্ষতি হবে না। তবে বৃষ্টি হলে পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়া পেঁয়াজের খেতেও পানি জমেছে বেশ। পুনরায় বৃষ্টি হলে পেঁয়াজের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাবে।
মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক কৃষিবিদ সুফি মোঃ রফিকুজ্জামান জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে ৫০ হাজার ৪৬৪ হেক্টর জমিতে রবিশস্যের চাষ হচ্ছে।
দুদিনের অব্যাহত বৃষ্টিতে নিচু এলাকার কিছু ফসলী জমিতে পানি জমেছে। যেখান প্রায় ৫ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমি বৃষ্টির পানিতে আক্রান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে চলছে ফসল কাটার উৎসব
তবে বৃষ্টিপাত আর না হলে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না। বরং বৃষ্টির পানির জন্য অনেক কৃষকের উপকার হবে। ইতিমধ্যে আক্রান্ত ফসলের তালিকা করা হয়েছে । তবে কতটা ক্ষতি হয়েছে সেটা নিরূপণ করতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। কৃষকরা যাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে জেলার সকল কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
শ্রাবণ/মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ